বরিশালে সয়াবিন ক্ষেত থেকে আওয়ামী লীগ নেতার লাশ উদ্ধার

জামালের স্ত্রী আঁখি বেগমের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন ঢালীর নেতৃত্বে তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2024, 09:38 AM
Updated : 16 March 2024, 09:38 AM

বরিশালের হিজলা উপজেলায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মেঘনা নদীর তীরে সয়াবিন ক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিজলা থানার ওসি জুবাইর আহমেদ জানিয়েছেন।

নিহত জামাল মাঝি (৫০) উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড পালপাড়া গ্রামের আ. কাদের মাঝির ছেলে।

তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ।

নিহত জামাল মাঝিকে নিজের অনুসারী বলে দাবি করে পঙ্কজ নাথের অভিযোগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ অনুসারীরা জামাল মাঝিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

জামালের স্ত্রী আঁখি বেগমের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন ঢালীর নেতৃত্বে তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যিনি এলাকায় শাম্মী আহমেদের অনুসারী বলে পরিচিত।

আঁখি বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, রাতে বাড়ি না ফেরায় রাত ২টার দিকে স্বামীর মোবাইলে কল দিয়েছিলেন তিনি। তখন পর্যন্ত তার স্বামী নিরাপদে ছিলেন। পরে সকাল ৯টার দিকে জানতে পারেন স্বামীর লাশ পড়ে আছে।

ওই ওয়ার্ডের চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) আলী আশরাফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন ঢালীর কাছ থেকে মোবাইলে জামাল মাঝির বাড়ির সামনে সয়াবিন ক্ষেতে লাশ থাকার খবর পান তিনি।

পরে সকাল ৮টায় সেখানে গিয়ে জামাল মাঝির ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানিয়েছেন।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন ঢালী বলেন, সকাল ৭টার সময় একজন তাকে ফোন করে সয়াবিন ক্ষেতের মধ্যে লাশ পড়ে থাকার কথা জানিয়েছে। পরে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি ঘটনাস্থলে চৌকিদার আলী আশরাফকে পাঠিয়েছেন।

তার (ইউপি চেয়ারম্যান) অনুসারীরা জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জামালউদ্দিন বলেন, “ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত পুলিশ এলাকায় ছিল। কারা করেছে, তারাই জানে না। আমি কীভাবে জানবো।”

নিহত জামাল মাঝি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।

সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “এর আগে ২ মার্চ চেয়ারম্যান জামাল ঢালীর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী জামাল মাঝির বাড়িতে হামলা করে। তারা জামাল মাঝিসহ পরিবারের সাত সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। পরে জামাল মাঝির ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।”

পঙ্কজ অভিযোগ করে বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত সাইফুল ইসলামকে শুক্রবার পেয়ে স্থানীয়রা মারধর করেন। পরে হিজলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায় আমার অনুসারীদের এলাকা ছাড়া করে। এমনকি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।”

সংসদ সদস্য আরও বলেন, পুলিশের কারণে সবাই এলাকা ছাড়া হলেও জামাল মাঝি এলাকায় ছিলেন। সকালে তাকে একা পেয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা।

অভিযোগ অস্বীকার করে পরিদর্শক (তদন্ত) দীপংকর রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ১৫ দিন ধরে ধুলখোলা ইউনিয়নে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে থানা ও আদালতে পাঁচটি পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে।”

কোনো বিশেষ পক্ষের হয়ে কাজ করেননি দাবি করে পরিদর্শক দীপংকর বলেন, “শুক্রবার একজনকে মারধরের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি দুই পক্ষ সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছে। তখন দু’জনকে গ্রেপ্তার এবং দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করা হয়েছে।”

ওসি জুবাইর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামাল মাঝিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তবে কে বা কারা হত্যা করেছে তা জানি না। তদন্ত করে বলতে পারবো কারা জড়িত ছিল।”