কৃষকরা জানান, তিন ফসলি মহিষার বিলে আবাদি জমি ছিল প্রায় ৪০০ একর; এর মধ্যে পুকুর খনন করে ২৫০ একর দখল করে ফেলা হয়েছে।
Published : 29 Jan 2024, 10:46 PM
হাই কোর্টের আদেশ অমান্য করে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
সোমবার দুপুরে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের নারী-পুরুষ মহিষার বিলের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে কৃষকরা জানান, গাঙ্গোপাড়া মহিষার বিলে আবাদি জমি ছিল প্রায় ৪০০ একর। এর মধ্যে পুকুর খনন করে এরই মধ্যে ২৫০ একর জমি দখল করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার ১০০ একর জমিতে পুকুর খননের চেষ্টা করছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, “পুকুর খনন বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এখানে পুকুর খননে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ছাড়া ফসলি জমিতে পুকুর খনন না করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। ফলে কোনোভাবেই পুকুর খনন করতে দেওয়া যাবে না।
“এরই মধ্যে অবৈধভাবে পুকুর খনন করায় ছয়টি মামলা হয়েছে। পুকুর খননকারী ও ভেকুর মালিক ছাড়াও যারা জমি ইজারা দিয়েছে তাদেরকে এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।”
মহিষার বিলে গাঙ্গোপাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর কবিরের জমি রয়েছে দুই বিঘা। তিনি বলেন, কৃষকরা জমি দিতে রাজি না হলেও গ্রামের কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী সেখানে পুকুর খননের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে পুকুর হলে প্রায় ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“ফলে এবার এখানে পুকুর খনন করতে হলে কৃষকের লাশের ওপর দিয়ে গিয়ে করতে হবে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, রোববার বিকালে ভেকু মেশিন নিয়ে বিলে পুকুর খননের চেষ্টা করা হয়। তখন গ্রামের লোকজন গিয়ে তাদের বাধা দেয়। জনতার রোষানলে তারা পুকুর খনন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
কিন্তু তাদের পুকুর খননের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ভেকু মেশিন এখনও তারা নিয়ে যায়নি। সেখানেই রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তারা ভেকু নিয়ে বিলে নামতে পারে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন গ্রামবাসী।
গাঙ্গোপাড়া গ্রামের কলেজ শিক্ষক শহিদুল ইসলামের ওই বিলে জমি রয়েছে ছয় বিঘা। অর্থের বিনিময়ে তিনি জমিতে পুকুর খনন করতে দিতে রাজি নন। কিন্তু জোর করে তার জমিতে পুকুর খননের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই বিলে হাতেগোনা কয়েকজন পুকুর খনন করার জন্য জমি লিজ দিয়েছেন। অধিকাংশই জমি দিতে রাজি নন। জোর করে অন্যদের জমি দখল করে পুকুর খনন করতে চান তারা।”
গ্রামের লোকজন জানান, এখানে পুকুর খনন করা হলে তেলিপুকুর, গাঙ্গোপাড়া, মারিয়া, হাজরাপাড়া, চাম্পাকুড়ি, লাড়ুপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিলে পুকুর খনন করা হলে বর্ষার পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে উঁচু জমিসহ গ্রামগুলো প্লাবিত হবে। ফলে উঁচু জমির ফসল নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলোতে মানুষের বসবাস দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
মানববন্ধনে জমির মালিক খলিলুর রহমান, আফসার প্রামাণিক, সোলেমান আলী, আব্দুর রশিদ, হাসান আলী বক্তব্য দেন। বিলে তাদের এক থেকে চার বিঘা পর্যন্ত জমি রয়েছে।