সিলেট শহীদ মিনার বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহার নয়: মেয়র

“শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে।”

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2023, 01:49 PM
Updated : 11 March 2023, 01:49 PM

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আগের নিয়মেই পরিচালিত হবে; বাণিজ্যিক কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবে না বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। 

শনিবার দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিচালনা বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সিটি করপোরেশন। 

কমিউনিস্ট পার্টির (সিবিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করেতে ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বরাদ্দ চেয়ে সিটি করপোরেশনে আবেদন করেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান। 

তার ভাষ্য, সিসিক কর্মকর্তারা ১ মার্চ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি প্রদান করতে হবে বলে জানান। বরাদ্দের জন্য আবেদন জমা দিলে তাকে জানানো হয়, ১ মার্চ থেকে শহীদ মিনার ব্যবহারে এক হাজার টাকা ফি এবং ১৫০ টাকা কর দিতে হবে। সিসিক মেয়র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়। 

খায়রুলের মাধ্যমেই শহীদ মিনার ব্যবহারে ফি নির্ধারণের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেন- দেশের কোনো শহীদ মিনার ব্যবহারে টাকা লাগে না। এটি উন্মুক্ত স্থান। এখানে ফি নির্ধারণ করা হবে কেন? 

এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি আজকের সভায় আলোচনায় আসে বলে জানান অংশগ্রহণকারী কয়েকজন।  

‘সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর কার্যক্রম স্থগিত এবং ‘শহীদ মিনার ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ এর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তরের সময় নেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকেই শহীদ মিনার পরিচালিত হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। 

সেইসঙ্গে জাতীয় দিবস ঘিরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে- প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে রাষ্ট্রিয় পদমর্যাদা (ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ট) অনুযায়ী হবে বলে জানানো হয়। 

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো-

১. সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সামগ্রিক দায়িত্ব সিলেট সিটি কর্পোরেশন পালন করবে। শহীদ মিনারের কর্মচারী নিয়োগ, বরখাস্ত, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে পরিচালিত হবে। 

২. শহিদ মিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে এবং যথোপযুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা শহীদ মিনারের মৌল ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনও সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম যাতে না হয় সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন সদা সতর্ক ও যত্নবান থাকবেন। 

৩. বইমেলা ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম শহীদ মিনারে করা যাবে না। 

৪. শহীদ মিনারে কোনও অনুষ্ঠান বা যে কোনও কার্যক্রম আয়োজনের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের পূর্বানুমতি প্রয়োজন হবে। অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে ২ ও ৩ নম্বর দফায় বর্ণিত নীতিসমূহ নিষ্ঠার সঙ্গে বিবেচনা করবেন এবং অনুষ্ঠানের ধরণ উল্লেখ্য পূর্বক অনুমতি প্রদান করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া ধর্মভিত্তিক কোনও সংগঠনকে শহীদ মিনার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। 

৫. অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ অপরাপর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সিলেট এ যাবৎকালে চলে আসা নিয়মানুযায়ী করবে। তবে ভবিষ্যতে এ সমস্ত সংগঠনের কোনও একটি বা উভয়টি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লে কিংবা দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করলে তৎকালে ক্রিয়াশীল সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। 

৬. শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদ নেতাদের নামফলক বর্তমানে যেভাবে আছে সেভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এখানে কোনও সংযোজন বা বিয়োজন করা যাবে না। পুনর্র্নিমাণ, সংস্কার, সৌন্দর্যবৃদ্ধি ক্ষেত্রে নামফলক সাময়িকভাবে সরানোর প্রয়োজন হলে এতে লিখিত সকল নাম অবিকৃতভাবে এবং হুবহু ক্রমানুসারে তা পুনঃস্থাপন করতে হবে। 

৭. বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের ক্ষেত্রে শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের যে নিয়ম চলে আসছে তা স্থগিত করা হলো। এখন থেকে বাস্তবায়ন পরিষদের নামে কোনো শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে না। 

৮. শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লেখিত ক্রম অনুসরণ করা হবে। 

ক) জাতীয় দিবস সমূহে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং পরে রাষ্ট্রের পদ মর্যাদা ক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ট) অনুসারে হবে। একইভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ক্রম অনুসরণ করা হবে। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, পান্না লাল রায় ও মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, রাজনীতিবিদ বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য, সিকান্দর আলী ও মো. আরিফ মিয়া, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল-আজাদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ররি কিরণ সিংহ রাজেশ, সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শামসুল আলম সেলিম।