ফারদিনের বাবা বলেন, “একটার পর একটা মেধাবী সন্তান আমরা হারিয়ে ফেলছি।”
Published : 08 Nov 2022, 03:31 PM
ডিসেম্বরে স্পেনে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা ছিল বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের; কিন্তু তার আগেই তিনি খুন হলেন।
তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ৷
তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন; পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মর্গের সামনে কাঁদতে কাঁদতে পরশের বাবা নূর উদ্দিন রানা বলছিলেন, “লাশ পাওয়া গেছে, যে সন্তানকে হারিয়ে ফেলেছি, এখন সে সন্তানকে তো আর ফিরে পাবো না।
“ডিসেম্বরে ওর ওয়ার্ল্ড ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল। ডিবেটিংয়ে ফারদিন খুব ভালো ছিল। তার পাসপোর্ট রেডি হয়েছে, স্পেন যাওয়ার কথা ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য৷”
ফারদিন পরিবারের সঙ্গে ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় থাকতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন বলেন, “শুক্রবার বাসা থেকে বের হয়েছিল বুয়েট ক্যাম্পাসে যাবার উদ্দেশে৷ পরদিন (শনিবার) পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরবে বলে জানিয়েছিল৷ কিন্তু শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷ রামপুরা থানা এলাকায় তার সর্বশেষ লোকেশন ছিল৷”
“শনিবার দিন পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় তার নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়ে৷ এরপর থেকে অনেক খোঁজাখুজির পর রামপুরা থানায় জিডি করলাম। তার সঙ্গে কী হয়েছে আমরা কোনো ধারণা করতে পারছি না। ওর কোনো শত্রু থাকার কথা নয়।”
জিডি করার পর পুলিশ দ্রুততম সময়ে মোবাইল ট্র্যাকিং ও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কাজ শুরু করলে ‘কিছু একটা পাওয়া যেত’ বলে মনে করেন নূর উদ্দিন৷
তিনি বলেন, “পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছে। এরপরও যদি দ্রুততম সময়ে ভিডিও ফুটেজগুলো সংগ্রহ ও সর্বশেষ যেসব পয়েন্টে এবং কোন কোন স্থানে তার ফোন সচল ছিল সেটা শনাক্ত করলে কিছু একটা পাওয়া যেত।”
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ফারদিনের ময়নাতদন্ত হয়। পরে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ সাংবাদিকদের জানান ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়েছে।
তিন সদস্যের চিকিৎসক দলের প্রধান বলেন, “নিহতের মাথা ও বুকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ তিনদিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ মৃত্যুর আগে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ওই ছাত্র৷ এটি হত্যাকাণ্ড বলেই ময়নাতদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে৷”
ফারদিনের লাশ মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১টার দিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ফ্রিজিং ভ্যানে ফারদিনের মরদেহ হাসপাতাল থেকে দাফনের জন্য রওনা হন তার স্বজনরা৷
হত্যাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়ে নূর উদ্দিন বলেন, “যেমন পাথর আমার বুকে চাপা পড়ছে, এমন পাথর যেন আর কোনো পিতার বুকে চাপা না পড়ে৷ আর কারো সঙ্গে যেন এমন না হয়। একটার পর একটা মেধাবী সন্তান আমরা হারিয়ে ফেলছি। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।”
এদিকে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দুইদিন আগে তার এক আত্মীয় আমাদের থানায় এসে রিপোর্ট করেছেন, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে তার লোকেশন দেখলাম তার এক বান্ধবীর বাড়ির কাছে। পরে তার লাশ পাওয়া গেল। এটা আমাদের ইনকোয়ারিতে আছে। সঠিক তথ্য পেলেই আপনাদেরকে জানাব।”
আরও পড়ুন:
বুয়েট ছাত্র ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে: ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক