তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে চারা খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় পাতা হলুদ হয়ে যায় বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক।
Published : 16 Jan 2024, 02:42 PM
কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো শীতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের আলো ঠিকমতো না থাকায় বোরো বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত ও আবাদ বিঘ্নিত হওয়ায় কৃষকের উদ্বেগ বাড়ছে।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় জেলায় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান।
আগামী দুই-তিনদিন এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। তবে মাসের শেষে একটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তীব্র ঠাণ্ডায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকেই কাজের ফাঁকে শুকনো খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
এদিকে তীব্র শীতে বোরো বীজতলা ও আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। শীত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে স্বচ্ছ সাদা রঙের প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখছেন বীজতলা। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে জমিতে চারা রোপণের সাহস পাচ্ছে না কৃষকেরা।
এ বিষয়ে কথা হয় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা হিন্দুপাড়া গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “বোরো আবাদের জন্য বীজতলার চারার পরিণত বয়স হয়েছে। কিন্তু প্রচুর ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে জমিতে চারা রোপণ করতে পারছি না। এদিকে বীজতলাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে প্লাস্টিকে কাগজ দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছি।”
একই এলাকার কৃষক মন্তাজ আলী বলেন, “যে শীত পড়ছে বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বিশেষ করে আলু ক্ষেত, বীজতলায় হীম ধরা শুরু করেছে। স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কী হবে আল্লাহ জানে।”
মাঠে কাজ করা দিনমজুর রহমত আলী বলেন, “বাহে প্রচুর ঠান্ডা পড়ছে। হাত পা টট্টরিয়া নাগছে (বরফ মত)। মাঠে এক-দেড় ঘণ্টা কাজ করলে আর কাজ করা যায় না। কাজের ফাঁকে আগুন তাপা নাগে। কি করমো কাজ না করলে পেটে কি ভাত জুটবে?”
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, “জেলায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় কৃষকদের বোরো আবাদে বিলম্বিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বীজতলা এখনো নষ্ট হওয়া শুরু করে নাই। তবে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে চারা খাদ্য গ্রহণ করতে না পারায় পাতা হলুদ হয়ে যায়।”
বীজতলা নষ্টের হাত থেকে বাঁচতে কৃষকদের বাড়তি যত্ন ও ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।