কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, চার মাস ধরে অচল স্ক্যানিং মেশিনগুলো সচলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
Published : 25 Feb 2024, 08:49 AM
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলে স্থাপিত চারটি স্ক্যানারের তিনটিই বিকল হয়ে পড়ে আছে চার মাস ধরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্ক্যানিং বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র দুই দেশের মধ্যে সোনা, মাদকসহ মূল্যবান সম্পদ পাচার করছে। এর ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মেশিনগুলো মেরামতে ব্যবস্থা নিতে তারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
আবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, মেশিনগুলো মেরামতের জন্য একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে স্ক্যানারগুলো সচল করতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, সে বিষয়ে তারা কোনো ধারণা দিতে পারছেন না।
বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, “আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চারটি স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে।
“এর একটি ‘মোবাইল স্ক্যানার’ স্থাপন করা হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশ দ্বারে।”
স্ক্যানারটি ঘণ্টায় দেড়শটি বক্স স্ক্যান করতে সক্ষম জানিয়ে তিনি বলেন, “পাঁচ কোটি টাকা দামের এই অত্যাধুনিক স্ক্যানার দিয়ে কনটেইনার না খুলেই ভেতরের রঙিন ছবি তোলা যায়।
“এ ছাড়া মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্র ও মিথ্যা ঘোষণার পণ্যও শনাক্ত করতে পারে।”
বন্দর পরিচালক জানান, ২০২০ সালের এপ্রিলে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চীন থেকে আনা বেনাপোল বন্দরে এই কনটেইনার মোবাইল স্ক্যানিং মেশিনটি স্থাপন করা হয়।
স্থাপনের পর মেশিন চালানোর বিষয়ে এক চীনা প্রকৌশলী তিন মাস ধরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেন। বেশ কিছুদিন ভালোভাবে চলার পর অচল হয়ে পড়ে মেশিনটি। মেরামত করে সচলের পর যন্ত্রটি আবারও অকেজো হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া বেনাপোল আন্তর্জাতিক তল্লাশি চৌকিতে এবং রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী বহির্গমন কক্ষে বসানো স্ক্যানিং মেশিনগুলোও একই সময় ধরে অচল হয়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশির কাজে ব্যবহৃত স্ক্যানারটি কেবল ভালো আছে।
এপারের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কাস্টমস ও বন্দর পেরিয়ে বিভিন্ন অবৈধ পণ্য আটক হচ্ছে ভারতের পেট্রাপোলে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মাসে সোনা ও বিভিন্ন চোরাচালান পণ্যসহ ৩১ পাচারকারী আটক হয়। এদের মধ্যে ছয়জনকে বাংলাদেশ কাস্টমস ও বিজিবি সদস্যরা আটক করে। বাকিরা আটক হন পেট্রাপোল বন্দর ও বিএসএফের হাতে।
এদের মধ্যে আছেন সোনার বারসহ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ১৫ জন, ভারতীয় পাসপোর্টধারী সাতজন ও ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকচালক ছয়জন।
স্ক্যানিং মেশিনগুলো কাস্টমসের পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস।
প্রতিষ্ঠানটির বেনাপোল কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক বনি আমিন বলেন, “তিনটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে গত চার মাস ধরে স্ক্যানিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগেও কয়েকবার নষ্ট হয়েছিল স্ক্যানিং মেশিনগুলো।”
তার দাবি, “স্ক্যানিং মেশিন মেরামত করতে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। চুক্তি অনুযায়ী এর ব্যয় কাস্টমস বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।”
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, “এপারের স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় মূল্যবান সম্পদ অবাধে ওপারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ কাস্টমস অনেকটা অসহায় পড়ে পড়েছে।”
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, “স্ক্যানিং মেশিন নষ্টের সুযোগে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে চোরাচালানকারীরা অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে আসছেন। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। স্ক্যানিং বন্ধ থাকায় এ দেশ থেকে সোনাসহ মূল্যবান সম্পদ পাচার হচ্ছে ভারতে। বাণিজ্য নিরাপদ রাখতে স্ক্যানিং কার্যক্রম চালু করা জরুরি।”
বেনাপোল বন্দরটির পরিচালক রেজাউল করিম জানালেন, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৬৭ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার হন। বন্দর ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ছয় শতাধিক ট্রাক পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বন্দর ও কাস্টমস ইমিগ্রেশনে স্ক্যানিং পরিচালনা করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট থাকায় চোরাচালানের ঝুঁকি বাড়ছে। মেশিনগুলো দ্রুত সচল করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল শুল্ক ভবনের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম বলেন, “কনটেইনার মোবাইল স্ক্যানারটি মেরামতের জন্য একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পত্র দিয়েছি। আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এটি মেরামত করা সম্ভব হবে।”