পরিবারের সদস্যরা ভাড়া বাসা দেখার জন্য বরিশালে যাচ্ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
Published : 18 Apr 2024, 12:02 AM
ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় ট্রাকের চাপায় চারটি যানবাহনের নিহত ১৪ জনের মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন রয়েছেন; যারা প্রাইভেট কারে করে বরিশাল যাচ্ছিলেন।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে খুলনা-ঝালকাঠি মহাসড়কে গাবখান ব্রিজের টোলপ্লাজায় ঝালকাঠি শহরমুখী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থাকা তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয়। এবং বাহনগুলিসহ ট্রাকটি পাশের খাদে পড়ে যায়।
এতে প্রাইভেট কারসহ অন্য তিনটি ইজিবাইক ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। প্রাইভেট কারটিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সড়কের পাশের দুটি গাছ কেটে উদ্ধার করে। সেই প্রাইভেট কারের চালকও নিহত হয়েছেন।
প্রাইভেট কারে থাকা একই পরিবারের ছয়জন হলেন- ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সাউথপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার (৩০), তাদের তিন বছরের মেয়ে তানিয়া আক্তার, এক বছরের ছেলে তাহমিদ রহমান, নাহিদার সদ্য বিবাহিতা বোন নিপা আক্তার (২২) ও তার স্বামী ইমরান (২৬)।
প্রাইভেট কার চালক ইব্রাহিমের বাড়িও রাজাপুর উপজেলায়।
এই পরিবারের আত্মীয় মঠবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের সাবেক ইউপি সদস্য মো. তারিকুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককমকে বলেন, হাসিবুর বেসরকারি পার্সেল কোম্পানি রেইনবোতে চাকরি করেন। তিনি কয়েকদিন আগে সিলেট থেকে বরিশালে বদলি হয়েছেন। বরিশালে ভাড়া বাসা দেখার জন্য তারা প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলেন।
ইমরান ও নিপা দম্পতির বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস আগে। হাসিবুর ও ইমরান সম্পর্কে ভাইরা।
দুর্ঘটনা খবর পেয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন নাহিদা ও নিপার বড় বোন তরিকা আক্তার। তিনি হাসপাতালে লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন, “ওরে নাহিদা, ওরে নিপা তোদের ছাড়া আমি কেমনে থাকব।”
তরিকা আক্তার বলছিলেন, “নিপার মাত্র একমাস আগে বিয়ে হয়েছে। ওর হাতের মেহেদিও এখন পর্যন্ত মুছে নাই। দুপুর দেড়টার দিকে সবাইকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে প্রাইভেট কারে করে রওনা হয়। তার পরেই এই দুর্ঘটনার খবর পাই।”
এই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৪ জন ঝালকাঠিতে ১২ জন এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন মারা গেছেন।
ঝালকাঠিতে যারা মারা গেছেন তাদের মরদেহ সন্ধ্যার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন এ এইচ এম জহিরুল ইসলাম।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান এলাকার সেলিম হাওলাদারের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার ওস্তাগান এলাকার মান্নান মাঝির ছেলে সফিকুল মাঝি (৫০), একই উপজেলার নওপাড়া শেখেরহাটের আব্দুল হাকিমের ছেলে আতিকুর রহমান সাদি (১১), কাঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া এলাকার ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (২৫), তার মেয়ে নুরজাহান (৭), রাজাপুর উপজেলার উত্তর সাউথপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সোনিয়া বেগম (৩০), তাদের মেয়ে তানিয়া আক্তার (৩), তাহমিদ আক্তার (১), সোনিয়ার সদ্য বিবাহিতা বোন সাউথপুরের নিপা আক্তার (২২) ও তার স্বামী পিরোজপুরের বাসিন্দা বিমান বাহিনীর সদস্য ইমরান হোসেন (২৬), প্রাইভেট কারের চালক রাজাপুর উপজেলার ইব্রাহিম, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার মেসন্ডা এলাকার সুবিদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৭০) এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামনগর এলাকার বাদশা মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম (৩৫)।
আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে ১৪ মৃত্যু: ট্রাকের চালক ও সহকারী গ্রেপ্তার
ঝালকাঠিতে চার বাহনকে ট্রাকের চাপা, ১৪ জনের মৃত্যু
ঝালকাঠিতে ১৪ মৃত্যু: দুই ইজিবাইকের যাত্রীরা যাচ্ছিলেন বৌভাতে