সরকারের নেওয়া ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় কৃষকরা কফির আবাদ শুরু করেছেন।
Published : 15 Feb 2024, 08:50 AM
খাগড়াছড়িতে চাষ হচ্ছে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও জনপ্রিয় পানীয়টির মূল উপাদান কফি ফলের চাষের সঙ্গে যুক্ত জেলার এক হাজারের বেশি কৃষক।
সরকারের নেওয়া ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় চাষিরা কফির আবাদ শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ কফি গাছ রোপণ করা যায়। এতে কফি উৎপাদন পর্যন্ত খরচ পড়ে ৩০ হাজার টাকা। বছরে ২০০ কফি গাছ থেকে এক হাজার ৬০০ কেজি পর্যন্ত কফি ফলন পাওয়া যায়। যার ন্যূনতম বাজারমূল্য ১ লাখ ৬০ টাকা।
পাহাড়ে স্ট্রবেরি, মাল্টা, ড্রাগনসহ দেশি-বিদেশি অনেক নতুন ফসলের চাষ হচ্ছে। অনেক জুমচাষিও প্রথাগত চাষের পাশাপাশি এসব ফলের খামার-বাগান গড়ে তুলছেন। নতুন নতুন এসব ফসল আবাদ করে তারা লাভের মুখও দেখছেন। সেই হিসেবে, কফি চাষ পাহাড়ের ফসলে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে।
কফি নিয়ে গবেষণা
পাহাড়ের কৃষি অর্থনীতিতে কফিকে একটি সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।
২০০১ সালে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ‘জার্মপ্লাজম সেন্টার’ কফি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।
দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২৩ সালের জুনে বারি কফি-১ নামে প্রথম কফির জাত অবমুক্ত করা হয় বলে জানান ওই গবেষণার কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক।
তিনি বলেন, “বারি কফি-১ বাংলাদেশের প্রথম কফির জাত। যেটি এই কেন্দ্রের উদ্ভাবিত। এটি উচ্চ ফলনশীল একটি জাত। এ জাতের কফির গাছ থেকে প্রতিবছরই ফল পাওয়া যায়।
“গবেষণা চলার সময় প্রতিটি গাছ থেকে আট কেজি পর্যন্ত ফলন পেয়েছি। এই জাতের কফি রোগবালাই সহিষ্ণু। এ জাতের কফি গাছ ছায়াযুক্ত স্থানেও লাগানো যায়।”
বারি-১ কফি দেশের সর্বত্র চাষাবাদের উপযোগী দাবি করে তিনি বলেন, “গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কফির জাত ৪২টি প্লট প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবাদ হয়েছে। সেখানেও সাফল্য পাওয়া গেছে। প্রতিটি প্লটেই কফির চারার ভালো বৃদ্ধি হয়েছে এবং কোথাও কোথাও ফল আসা শুরু হয়েছে।”
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার আট মাইল এলাকায় দুই একর জমিতে এক হাজার ২০০ কফির চারা রোপণ করেছেন জলেশ্বর ত্রিপুরা।
এই চাষি বলেন, “অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফির চারা রোপণ করেছি। চারার বয়স তিন বছর হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটা গাছে কফি ফল এসেছে। আশা করি, আগামী বছর বেশিরভাগ গাছে ফল আসবে।”
তবে শুষ্ক মৌসুমে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় পানি সংকটে কফি চাষে সমস্যার কথা জানালেন তিনি।
সাত মাইল এলাকার কৃষক গণেশ ত্রিপুরা বলেন, “আমি এক একর জমিতে ৫০০ কফির চারা রোপণ করেছি। পাহাড়ের পাদদেশে রোপণ করা চারার অবস্থাও ভালো। কিন্তু ঢালু অংশের চারা পানির অভাবে মারা গেছে। যদিও বাকি গাছে চলতি মৌসুমে ফল এসেছে।”
প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই
কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে চাষিদের মধ্যে শঙ্কা থাকলেও তা কাটাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন।
তিনি বলেন, “কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য এলাকায় ১০০টির বেশি প্লটে কফি চাষ হচ্ছে। দুই বছর আগে আমরা চাষিদের যে চারা দিয়েছিলাম, সেগুলো ফলতে শুরু করেছে। কয়েক বছরের মধ্যে বিক্রিও করতে পারবেন তারা।”
এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি কফি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চারটি মেশিন উদ্ভাবন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্যে রয়েছে- কফি পালপার, কফি ডিহলার, কফি ভেন্ডার এবং কফি রোস্টার। এসব মেশিন খুবই মানসম্মত; দামও কম। বেশ কয়েকটি কোম্পানি বারির প্রযুক্তি ব্যবহার করে কফি প্রক্রিয়াজাতকরণের মেশিন উদ্ভাবন করছে। কৃষকরা তাদের থেকে কম মূল্যে এসব মেশিন কিনতে পারবেন। কফি গাছের পাতায় ছাত্রকের আক্রমণে পাতা ঝলসে গেলে ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।”
কফি সম্প্রসারণে কাজ করছে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, “স্বতঃস্ফূর্তভাবে কৃষক কফি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলায় এক হাজার ৯৪টি প্লটে কফি বাগান স্থাপিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ১৭৯ হেক্টর।”
চাষিদের মধ্যে কফি প্রক্রিয়াজাত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তিনিও জানান।
কিশোর কুমার বলেন, “তবে প্রকল্প থেকে চাষিদের নিয়ে দল গঠন করে কফি প্রক্রিয়ার মেশিন দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কৃষক নিজেরাই কফি প্রক্রিয়াজাত করতে পারবেন। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ির ছয়টি হর্টিকালচার সেন্টারে কফি প্রক্রিয়াজাতকরণের মেশিন আছে।”
কৃষকরা সেখানে তাদের কফি প্রক্রিয়াজাত করতে পারবেন বলে জানান উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার।