কেজিতে চার-পাঁচটি পাওয়া যায় এমন সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৯শ টাকায়।
Published : 01 Sep 2024, 01:03 PM
ভরা মৌসুমেও ফরিদপুরের বাজারে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ইলিশ না পেয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ, মজুদের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই মাছের দাম বাড়াচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।
শনিবার সরেজমিনে শহরের শরীয়াতুল্লাহ বাজার, টেপাখেলা বাজার, হেলিপ্যাড মাছ বাজারে দেখা যায়, অধিকাংশ খুচরা মাছ ব্যবসায়ীর কাছে ছোট-বড় নানা রকমের ইলিশ রয়েছে। প্রতিটি বাজারেই মোটামুটি একই দামে ইলিশ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
এর মধ্যে বরিশাল, ভোলা বা পটুয়াখালীর ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১৫শ থেকে ১৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজির উপরে গেলে তার দর ১৯শ থেকে ২২শ টাকায় উঠছে। আর কেজিতে চার-পাঁচটি পাওয়া যায় এমন সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ৯শ টাকায়।
তবে চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজারের ইলিশের দর কিছুটা কম।
মাছের এমন চড়া দামে ক্রেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণায় ইলিশ পাচারকারী চক্র ভয়ভীতিতে থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেট এখনও অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে চলছে। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তা সাধারণ।
জানা যায়, ফরিদপুরে ইলিশ মাসের বড় আড়তদার রয়েছে সাত জন ব্যবসায়ী। এদের হাতেই নির্ভর করে ইলিশের দর কম-বেশি।
হাজী শরীয়াতুল্লা বাজারের রুপালি ফিসের স্বত্বাধিকারী হারান সরকার বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলায় বাজারগুলোতে ইলিশের মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১১০ মণ ইলিশ আনা হয়। তবে মৌসুম ব্যতীত এই হার ৪০ থেকে ৬০ মণের মধ্যে বা কম-বেশি থাকে। কিন্তু শুধু ফরিদপুর পৌর এলাকাতেই প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ মণ ইলিশের চাহিদা রয়েছে।
বাজারের অতিরিক্ত দামের প্রসঙ্গে ইলিশের এই ব্যবসায়ী বলেন, মূলত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর থেকে মাছগুলো আনা হয়। ফরিদপুর পর্যন্ত সেগুলো আনার খরচ কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পড়ে যায়, তারপর আবার প্রতি কেজিতে বাজারের খাজনা দিতে হয় ৫০ টাকার বেশি।
“স্বাভাবিকভাবেই আমারা যে দরে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করি তার থেকে একটু বেশি দরে খুচরা পর্যায়ে বিক্রয় হয়। এছাড়াও নদী বা সাগরের মাছ ধরা পড়ার উপর দর অনেকটা নির্ভর করে।”
শরীয়াতুল্লাহ বাজারে ইলিশ কিনতে আসা রোকেয়া বেগম বলেন, “শুনেছি ইন্ডিয়ায় ইলিশ যাচ্ছে না। তবে ইলিশের মৌসুমে এতো দর হবে কেনো। বর্তমান সরকারের প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি ইলিশ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।”
বাজারের আরেক ক্রেতা সাইদা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন, “এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। প্রতি কেজি ইলিশের মূল্য ৬ থেকে ৭শ টাকা হওয়া দরকার। কিন্তু কেজিতে ৪টি ইলিশ, তার দর নিয়েছে সাড়ে ৮শ টাকা।”
এ বিষয়ে ফরিদপুরের ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ বলেন, “আমরা ইলিশ মাছ নিয়ে বাজারে কোনো ধরনের কারসাজি করতে দেব না। সিন্ডিকেট কিংবা যেই হোক অতিরিক্ত মুনাফায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, জেলা মৎস্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা সদস্যরা মিলে ইলিশের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযানে নামা হবে।
ইলিশের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে ফরিদপুর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসিন কবির বলেন, “বিষয়টি বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তে রয়েছে, আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে মাছের সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করব।”