“ভোটার উপস্থিতি অনেক; কিন্তু ভোট খুব স্লো হচ্ছে৷”
Published : 26 Jun 2024, 02:09 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটের শুরুতেই কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট ভোটগ্রহণে ধীরগতি হচ্ছে।
বুধবার সকাল ৮টায় পৌরসভার ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়; বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত৷
ভোট শুরুর পর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাটাব প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ভোটারদের পাশাপাশি কেন্দ্রটিতে পুলিশের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো ছিল।
এ কেন্দ্রে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের কোনো অভিযোগ না থাকলেও ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার কথা জানিয়েছেন অনেকে।
হাটাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের পৃথক দুটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে৷ পোলিং বুথ রয়েছে ছয়টি করে মোট ১২টি।
ভোট শুরু হওয়ার পর সোয়া এক ঘণ্টায় নারী কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ১০২টি৷ এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৫৮৩ জন বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পল্লব বালা৷
ততক্ষণে পুরুষ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৫৪টি৷ সেখানে মোট ভোটার ১ হাজার ৬০০ জন৷ কেন্দ্রটির ২ নম্বর বুথের ইভিএম মেশিনটিতে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটি পরিবর্তন করা হয় বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সোহেল রানা৷
এক ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, একজন ভোটার আঙুলের ছাপ মেলানো থেকে ভোট দিয়ে বুথ থেকে বের হতে ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় নিচ্ছেন৷
ভোটার ও নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএমে ‘নিয়মিত ভোট না দেওয়ায়’ ভোটাররা তা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে ভোট দিতে সময় নিচ্ছেন৷ অনেক ভোটারকে ‘একাধিকবার’ বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে।
হাটাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন আর হক দেওয়ান৷ তিনি তার আঙুলের ছাপ মেলানোর পর ভোট দিতে প্রায় তিন মিনিট সময় নিয়েছেন বলে বুথ থেকে বেরিয়ে এসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
দেওয়ান বলেন, “আমি এর আগেও ইভিএমে ভোট দিছি৷ তাই একটু তাড়াতাড়িই দিতে পারছি৷ কিন্তু অনেকে দেরি করে৷ ইভিএম তো সবাই বোঝে না৷”
কেন্দ্রটির সামনে অন্তত ৩০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. জাকারিয়া নামের এক ভোটার। তিনি বলেন, “ভোট খুব স্লো হচ্ছে৷ এমন সারাদিন থাকলে তো ভোটারগো কষ্ট হইবো৷ এখন তো রইদ নাই, রইদ বাড়লে গরমে অনেক কষ্ট বাড়বো।”
ভোটার উপস্থিতি প্রসঙ্গে এ ভোটার বলেন, “পৌরসভা নির্বাচন তো, তাই ভোটার বেশি৷ কাউন্সিলররা ভোটার টানেন৷ আমি নিজেই তো উপজেলা ভোট দেই নাই। কিন্তু এই ভোট দিতে সকালেই আইছি৷”
এ কেন্দ্রটির একটি কক্ষে এক নারী ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলায় তার আঙুল ধুয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগানো হয়৷ পরে কিছুক্ষণের চেষ্টায় আঙুলের ছাপ মিললে তিনি ভোট দিতে পারেন।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন দুই প্রার্থী। তারা হলেন- কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম (জগ প্রতীক) এবং পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) ও সাবেক মেয়র দেওয়ান আবুল বাশার (মোবাইল ফোন প্রতীক)।
এ ছাড়া ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আছেন।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে হাটাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন মেয়র প্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার (বাদশা)৷
ভোটের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোথাও কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা দেখিনি৷ ভোটার উপস্থিতি অনেক; কিন্তু ভোট খুব স্লো হচ্ছে৷”
ভোটগ্রহণে এ রকম ধীরগতি থাকলে অনেক ভোটার বিরক্ত হয়ে ফিরে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন এ প্রার্থী৷
সোয়া ৯টার দিকে কেন্দ্রটিতে আসেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী সেলিনা আক্তার ও তার ষাটোর্ধ্ব বোন জমিলা৷ ভোটের দীর্ঘ লাইন দেখে তারা চলে যাচ্ছিল।
ভোট না দিয়ে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সেলিনা বলেন, “এই বয়সে শরীর নিয়া এত বড় লাইনে দাঁড়াইয়া থাকতে পারুম না৷ ভিড় কমলে পরে আবার আসমু।”
এদিকে হাটাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পল্লব বালা বলেন, “এখানে ভোট কক্ষগুলো আয়তনে খুবই ছোট৷ কিন্তু ছোট কক্ষগুলোতেই দুটি করে বুথ রাখা হয়েছে৷
“এতে নির্বাচন কর্মকর্তা আর প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা বসার পর ভোটাররা ঢুকলে আর জায়গা থাকে না৷”
৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও নারী ও পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে৷ এ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ভোটারদের৷
বিশেষ করে বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের একাধিকবার ইভিএম পদ্ধতি বুঝিয়ে দিলেও তারা ভোট দিতে ‘দেরি’ করছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তারা৷
কেন্দুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং অফিসার নার্গিস আক্তারকে চারজন নারী ভোটারকে অন্তত তিনবার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বোঝাতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে নার্গিস বলেন, “বার বার বুঝাইতে হইতেছে৷ বুঝাইতে বুঝাইতে গলা ব্যথা হইয়া যাইতেছে৷ তাদের বুঝাতে গিয়ে ভোটগ্রহণে দেরিও হইতেছে৷”
এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলছিলেন, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ১৮ জন৷ ভোটর শুরুর পর দুই ঘণ্টায় মোট ৩৪৯ জন ভোট দিয়েছেন৷
৩ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়েছে।
এ প্রতিষ্ঠানের নারী কেন্দ্রটিতে ২ হাজার ৭৮০ জন ভোটারের মধ্যে দুই ঘণ্টায় ৫৯৬ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রেজাউল করিম৷
তিনি বলেন, “সকাল থেকেই ভোটারদের চাপ বেশি৷ বয়স্ক ও অশিক্ষিত ভোটারদের সময় বেশি লাগছে৷ কিন্তু কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলছে৷”
কেন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দের সঙ্গে।
এ কর্মকর্তা বলেন, “ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ব়্যাব, বিজিবিও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন৷ তাছাড়া জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন।”
ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটারদের অনভিজ্ঞতায় ভোটগ্রহণে দেরি হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল বলেন, “আগে মক ভোটিং সিস্টেম ছিল। কিন্তু ভোটারদের আগ্রহ না থাকায় ওই পদ্ধতি বন্ধ করেছে কমিশন৷
“এখন কেন্দ্রের ভেতরই তাদের ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে৷ নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটারদের বুঝিয়ে দেওয়ায় সহজেই ভোট দিচ্ছেন৷”
এদিকে ভোট চলার মধ্যেই বেলা ১১টায় কিছুক্ষণ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হয়৷ তবে বৃষ্টির স্থিতিকাল ১৫ মিনিটের বেশি না হওয়াতে ভোটার উপস্থিতিতে তা প্রভাব ফেলেনি৷