ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমূল ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে ইজিবাইকের সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন।
Published : 26 Nov 2024, 08:16 PM
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় রেললাইনে উপর ট্রেনের ধাক্কায় ইজিবাইকের যে সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে এক আন্তঃসত্ত্বা নারী ছিলেন।
প্রায় আট মাসের গর্ভবতী শাহিনুর আক্তার শানু ব্যক্তিগত কাজেই মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে গাজীপুর বাজারে যাচ্ছিলেন গ্রামের আরো অনেকের সঙ্গে।
পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে উপজেলার বাকশিমূল ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় একটি অবৈধ রেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে প্রাণ হারান শানু (৩৫)।
শানুর স্বামী কৃষক মনির হোসেন (৪০) বাড়িতে বিলাপ করে বলছিলেন, “কয়েকদিন পরেই আমাদের ঘর আলোকিত করে নতুন অতিথি আসার কথা ছিল। এর আগেই সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমার সব অন্ধকার। আমার স্ত্রীর সঙ্গে মারা গেল পেটের সন্তানও।”
মনির হোসেনের বাড়ি উপজেলার বাকশিমূল গ্রামেই। মনির-শানু দম্পতির ১০ বছরের এক ছেলে রয়েছে।
বিকালে সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারি। মনির আর তার ছেলেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন সবাই।
সকালে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের এই ধাক্কায় ইজিবাইকের মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। শানু ছাড়া অন্যরা হলেন- উপজেলার বাকশিমূল গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক সাজু মিয়া (৩৮), মৃত মুনসুর আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৮০), মৃত আবদুল খালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৫), আলী আশ্রাফের স্ত্রী সফরজান বেগম (৬৫), পাশের খোদাইধুলি গ্রামের প্রয়াত আছমত আলীর ছেলে রফিস মিয়া (৬০) এবং প্রয়াত ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৬৫)।
এ দুর্ঘটনার পর বাকশিমূল গ্রামে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রিয় স্বজনকে এভাবে হারিয়ে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা। গ্রামের মানুষ ওই স্থানে বৈধ রেলগেইট নির্মাণ করে গেইটম্যান নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ট্রেনের নিচে ইজিবাইক: নিহত বেড়ে ৭, 'রেল ক্রসিংটি অবৈধ'
কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাকশিমূল গ্রামের বাসিন্দা এ আর বিজয় বলেন, “ট্রেনটি হুইসেল দিয়েই আসছিল। কিন্তু এরপরও চালক সাজু মিয়া ইজিবাইক নিয়ে রেললাইনে উঠে পড়েন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন পার হতে পারবেন, কিন্তু সেটি আর সম্ভব হয়নি।
“ঘটনার পর মরদেহগুলো রেললাইন পড়েছিল। পরে নিহতদের পরিবারের লোকজন এসে মরদেহের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো তুলে নিয়ে যায়।”তদন্তে রেলের কমিটি
এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে।
রেলওয়ের কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। দুর্ঘটনার পরপরই পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে কুমিল্লার সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলীকে। আর বাকি তিন সদস্য হলেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের। তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে দুর্ঘটনার পেছনের কারণ বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে জানাতে বলা হয়েছে।