টংক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং আর নেই

তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2024, 10:39 AM
Updated : 23 March 2024, 10:39 AM

ঐতিহাসিক টংক আন্দোলনের সাক্ষী নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কুমুদিনী হাজং মারা গেছেন।

শনিবার বেলা ১টা ৪০ মিনিটে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের বাড়িতে তার মৃত্যু হয় বলে বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং জানান।

তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন।

পল্টন হাজং বলেন, কুমুদিনী হাজং বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। তার এক মেয়ে ঢাকায় থাকেন। তিনি আসার পর স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে শেষকৃত্য করার সময় নির্ধারণ করা হবে।

কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহ’র নেতৃত্বে টংক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয় দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদায়। এরই অংশ হিসেবে কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং অন্দোলনে জড়িত হন।

১৯৪৬ সালে ৩১ জানুয়ারি বহেরাতলী গ্রামে লংকেশ্বরের বাড়িতে হানা দেয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর সশস্ত্র সেনারা। এ সময় স্বামীর অবস্থান জানাতে না চাইলে কুমুদিনীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নারী নেত্রী রাশিমনি হাজংয়ের নেতৃত্বে শতাধিক হাজং নারী-পুরুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

কুমুদিনীকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে নৃশংসভাবে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে রাশিমনি ও সুরেন্দ্র হাজংসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। পরে সেনারা কুমুদিনীকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

ওই ঘটনার পর সংজ্ঞাহীন কুমুদিনী হাজংকে গ্রামবাসীরা বহেরাতলীর অদূরে গভীর পাহাড় ঘেরা আড়াপাড়া অরণ্যে কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মনি সিংহ-এর গোপন আস্তানায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন কুমুদিনীর স্বামী ও ভাসুররা।

এ ঘটনায় সরকার হাজং অধ্যুষিত গ্রামগুলোর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি সরকার বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করে। মামলায় কমরেড মনি সিংহ, লংকেশ্বর হাজং তাঁর তিন ভাই ও কুমুদিনী হাজংসহ অনেক হাজং আন্দোলনকারীকে আসামি করা হয়।

সে সময় সুসং অঞ্চলের প্রায় সকল হাজং পরিবারকেই পুলিশের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে ফেরারী জীবন যাপন করতে হয়েছিল। কুমুদিনী হাজং পুলিশের অত্যাচার ও গ্রেফতার এড়াতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার লক্ষ্মীকুড়া গ্রামে বলেশ্বর হাজং এর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। কেউ যেন তাকে চিনতে না পারে সেজন্য বলেশ্বর হাজংয়ের পরামর্শে কুমুদিনী হাজংয়ের নাম বদলে ‘সরস্বতী’ রাখা হয়েছিল।

আন্দোলনের মুখে ১৯৫০ সালে বিলুপ্ত হয় টংক প্রথা।