গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা থেকে ময়মনসিংহের যাত্রীপ্রতি ৩৫০ টাকা নিচ্ছেন বলে জানান পিকআপ চালক আলমগীর হোসেন।
Published : 08 Apr 2024, 08:35 PM
গাজীপুরে পরিবহন সংকটে পড়ে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপে করে বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন; এতে তাদের ভাড়াও অনেক বেশি গুনতে হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে ছুটি পেয়ে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে লাখ লাখ তৈরি পোশাক শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদযাত্রায় শামিল হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নামে।
দুপুর ২টায় গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ময়মনসিংহগামী ১৪-১৫টি খোলা ট্রাক, ৭-৮টি পিকআপ যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাকে উঠতে ব্যবহার করা হয়েছে বসার টুল। জনি নামের ট্রাকের এক চালকের সহকারী (হেলপার) ময়মনসিংহের ফুলপুরের যাত্রী ডাকছেন।
জনি জানান, সারা বছরই তারা ট্রাকে ময়মনসিংহ থেকে নির্মাণ কাজের বালু গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করেন। ঈদের ছুটিতে বালুর কোনো অর্ডার থাকে না। তাই মালিক ও চালক মিলে যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“ভবানীপুর থেকে ময়মনসিংহের ফুলপুর পর্যন্ত আমরা জনপ্রতি যাত্রী ৪৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছি। এর মধ্যে ৪০০ টাকায় কেউ রাজি হলেও আমরা তাকে তুলে নিচ্ছি। দিন শেষে হয়তো একটি ট্রিপ দেওয়া যাবে”, বলেন জনি।
একই কথা জানান ট্রাকের আরেক শ্রমিক আশরাফুল। তিনি বলেন, “ঈদের ২-৪ দিন আগে আমাদের আয়-উপার্জন বন্ধ থাকে। ঈদের যাত্রী পরিবহন করলে আয় হয়, ঈদ স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায়।”
গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা থেকে ময়মনসিংহের যাত্রীপ্রতি ৩৫০ টাকা নিচ্ছেন বলে জানান পিকআপ চালক আলমগীর হোসেন।
তিনি বলেন, “ঈদের আগে অনেক কারখানা থাকে বন্ধ, আমাদের কোনো কাজ থাকে না। মহাসড়কে অনেক যাত্রী, অনেকেই গাড়ি পাচ্ছেন না। তাই আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে, ঈদের ঘরে ফেরা মানুষের উপকারও হচ্ছে।”
পরিবার নিয়ে বাঘের বাজার এলাকায় নেত্রকোণার বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন মাহবুর রহমান। তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে যে বাসগুলো ময়মনসিংহের উদ্দেশে আসছে সবগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উঠতে পারছি না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বাধ্য হয়েই পিকআপে ময়মনসিংহের বাইপাস পর্যন্ত জনপ্রতি ১৫০ টাকায় রওনা দিয়েছি।”
আরেক যাত্রী শাহরিয়ার বলেন, “বাসের সংকট রয়েছে, তাছাড়া বাসের ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে খোলা ট্রাকে ২০০ টাকা ভাড়ায় ভালুকায় রওনা দিয়েছি।”
এতে ঝুঁকি থাকলেও বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ভবানীপুর থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যাচ্ছেন তৈরি পোশাক শ্রমিক শাহজাহান আহমেদ।
তিনি বলেন, বাসে ময়মনসিংহের ব্রিজ পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। অপরদিকে একই জায়গা থেকে ট্রাক আর পিকআপে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে।
“ঝুঁকি থাকলেও বাসের চাইতে সহজেই ট্রাক ও পিকআপ পাওয়া যাচ্ছে, ভাড়াও তুলনামূলক কম। তাই অনেকেই ট্রাকে পিকআপে যাতায়াত করছে।”
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মাহবুব মোরশেদ বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। এখন পর্যন্ত মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক আছে। দুপুর থেকে সড়কে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে।
এখনও অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ পাননি জানিয়ে ওসি বলেন, “কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সব যাত্রীকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে নিষেধ করা হচ্ছে। তবু কেউ চলাচল করলে তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”