ফেনীতে ইয়াবা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এসআই কারাগারে

বিল্লাল হোসেন কক্সবাজার পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 03:35 PM
Updated : 28 March 2023, 03:35 PM

ফেনীতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের মামলার ১৫ বছরের দণ্ড পাওয়া বরখাস্ত এসআই বিল্লাল হোসেন আদালতে আত্মসমর্পণের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী আইনজীবী (এপিপি) দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক।

গত ৬ মার্চ মাদকের মামলায় বিল্লালসহ ১৩ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় আদালত। রায়ে এসআই বিল্লালসহ ছয়জনকে ১৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিল্লাল হোসেন (৪০) কক্সবাজার পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি বরখাস্ত হন। তিনি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জিরুইন মতিন মেম্বারের বাড়ির বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি পলাতক ছিলেন।

ফেনী আদালত পুলিশের পরিদশর্ক গোলাম জিলানী জানান, বিল্লাল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার নথির বরাত দিয়ে আইনজীবী বলেন, ২০১৫ সালের ২১ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকায় একটি শিশুকে ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেট কার নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই মাহফুজুর রহমান। র‌্যাব-৭ ফেনীর এর একটি দল ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পরে তল্লাশি করে গাড়ি থেকে ছয় লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা ও নগদ সাত লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এএসআই মাহফুজুর রহমান ও গাড়ী চালক জাবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই বছরের ২২ জুন ফেনী মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। পরে ফেনী মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহীনুজ্জামানকে মামলার তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন।

মামলার দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবুল বশর ২০১৬ সালের ২২ মে পুনরায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সেবারও অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে ফের অভিযোগপত্র জমা দেন।

১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ১০ ডিসেম্বর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত। এ মামলায় এএসআই মাহফুজসহ পাঁচ আসামি দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

৬ মার্চের রায়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য, আইনজীবী, মুহুরীসহ ১৩ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল। রায় ঘোষণার সময় আদালতে আট আসামি উপস্থিত ছিলেন। পাঁচজন পলাতক ছিলেন। তাদের মধ্যে এসআই বিল্লাল হোসেন মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

Also Read: ফেনীতে ইয়াবার মামলায় পুলিশ, আইনজীবীসহ ১৩ জনের সাজা

এখনও পলাতক আসামিরা হলেন- এসআই আশিকুর রহমান আশিক, কনস্টেবল আবুল কাশেম, মুহুরী আব্দুল মোতালেব ও জাফর কোম্পানি। 

এই মামলায় ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পুলিশের বরখাস্তকৃত এএসআই (এসবি-ঢাকা) মো. মাহফুজুর রহমান, এসআই (এসবি-ককক্সবাজার) মো. বিল্লাল হোসেন বেলাল, এসআই (হাইওয়ে কুমিরা) মো. আশিকুর রহমান আশিক, সালেহ আহমদ ওরফে বার্মা সালেহ (রোহিঙ্গা), কক্সবাজারের বাসিন্দা ফরিদুল আলম ওরফে ফরিদ কোম্পানি, কক্সবাজারের মো. জাফর ওরফে জাফর কোম্পানি।

১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি-রাজারবাগ পুলিশ লাইন) কনস্টেবল মোহাম্মদ শাহীন, কনস্টেবল (কুমিল্লা) কাশেম আলী, কুমিল্লার অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন ওরফে ইয়াবা তোফাজ্জল, কুমিল্লা আদালতের মুহুরী মো. আব্দুল মোতালেব, গিয়াস উদ্দিন গেসু।

পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন এএসআই মাহফুজুর রহমানের গাড়ি চালক মো. জাবেদ আলী।