ফেনীতে ইয়াবার মামলায় পুলিশ, আইনজীবীসহ ১৩ জনের সাজা

আট বছর আগে প্রায় সাত লাখ ইয়াবা ও ৭ লাখ টাকাসহ এএসআই মাহফুজুর রহমান ও গাড়ির চালক জাবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 12:56 PM
Updated : 6 March 2023, 12:56 PM

ফেনীতে প্রায় সাত লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় আট পুলিশ ও এক আইনজীবীসহ ১৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। 

সোমবার ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (আদালত-১) সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এই রায় ঘোষণা দেন বলে জানান আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক। 

তিনি জানান, ১৩ জন আসামির মধ্যে ছয় জনের ১৫ বছর কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড; ছয় জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও চার মাসের কারাদণ্ড; এক জনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

১৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশের বরখাস্ত এএসআই (এসবি ঢাকা) মো. মাহফুজুর রহমান, বরখাস্ত এসআই (এসবি ককক্সবাজার) মো. বিল্লাল হোসেন বেলাল, বরখাস্ত এসআই (হাইওয়ে কুমিরা) মো. আশিকুর রহমান আশিক, সালেহ আহমদ ওরফে বার্মা সালেহ (রোহিঙ্গা), কক্সবাজারের বাসিন্দা ফরিদুল আলম ওরফে ফরিদ কোম্পানি, কক্সবাজারের মো. জাফর ওরফে জাফর কোম্পানি। 

১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল (এসবি, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস) মোহাম্মদ শাহীন, কনস্টেবল (কুমিল্লা) কাশেম আলী, কুমিল্লার আইনজীবী জাকির হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন ওরফে ইয়াবা তোফাজ্জল, কুমিল্লা আদালতের মুহুরী মো. আব্দুল মোতালেব ও গিয়াস উদ্দিন গেসু। 

পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন এসআই মাহফুজুর রহমানের গাড়ি চালক মো. জাবেদ আলী। 

দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক জনান, মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালতে আটজন আসামি উপস্থিত ছিলেন, পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। 

পলাতক আসামিরা হলেন আশিকুর রহমান আশিক, কনস্টেবল আবুল কাশেম, মুহুরী আব্দুল মোতালেব, বিল্লাল হোসেন বেলাল ও জাফর কোম্পানি। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম ফারুক ও জাহিদ হোসেন কমল বলেন, “আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করছি ন্যায় বিচার পাব।” 

মামলার নথির বরাত দিয়ে দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক জানান, ২০১৫ সালের ২১ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকায় একটি শিশুকে ধাক্কা দিয়ে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই মাহফুজুর রহমান। 

এ সময় ফেনীর র‌্যাব-৭ এর একটি দল গাড়িটি ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পরে তার গাড়ি তল্লাশি করলে ৬ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমান ও গাড়ির চালক জাবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। 

র‌্যাব-৭ এর নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে পরের দিন (২২ জুন) ফেনী মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। 

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহীনুজ্জামানকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেয়। 

আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি আরও জানান, মামলা দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক আবুল বশর ২০১৬ সালের ২২ মে পুনরায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত আবার অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। 

মামলার তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে ফের অভিযোগপত্র জমা দেন। 

২০২২ সালে ২৯ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (১) বদলি করা হয়। 

এএসআই মাহফুজুর রহমান ও আইনজীবীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত। 

এপিপি জানান, মামলার তদন্ত পর্যায়ে এএসআই মাহফুজুসহ পাঁচজন আসামি দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। মাহফুজ তার স্বীকারক্তিতে কুমিল্লার আইনজীবী জাকির হোসেন ও মহুরী মো. আব্দুল মোতালেবের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া মাহফুজুরের গাড়িতে পাওয়া একটি ডায়েরিতে তাদের নাম লেখা ছিল। 

তিনি জানান, এ মামলায় ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদীসহ ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

মামলার দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে গত ১ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের পূর্ণাঙ্গ যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ৬ মার্চ রায়ের দিন ধার্য করে। 

ফেনী আদালত পুলিশের পরিদশর্ক গোলাম জিলানী জানান, রায় ঘোষণার পর আসামিদের আদালত থেকে বিশেষ নিরাপত্তায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।