গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন এলাকায় একটি বিকল্প বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
Published : 31 Mar 2025, 04:21 PM
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ দেড়শ ফুট ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। নতুন করে জোয়ারের তোড়ে দেখা দিয়েছে নতুন ভাঙন।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামে প্রায় দেড়শ ফুট এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের ঈদের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়েছে।
গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন স্থানে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিছট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, “সোমবার সকালে আমরা সবাই ঈদের নামাজ আদায় নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। নামাজ শেষে জানতে পারলাম, আব্দুর রহিম সরদারের চিংড়ি ঘেরের বাসার কাছ থেকে প্রায় দেড়শ ফুট “বেড়িবাঁধ হঠাৎ ভেঙে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি গ্রামের মসজিদের মাইকে প্রচার দিয়ে দ্রুত লোকজনকে ভাঙন পয়েন্টে যেতে বলা হয়।
“গ্রামবাসী স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন পয়েন্টে একটি বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভাঙন পয়েন্টে দ্রুত একটি বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে দুপুরের জোয়ারে বিছটসহ আশপাশের ৭-৮টি গ্রাম প্লাবিত হবে।”
স্থানীয় আনুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, “ঈদের নামাজ আদায় করার সময় ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি, বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ থেকে বাঁধ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করছে। দ্রুত নামাজ শেষ করে এলাকার হাজার হাজার মানুষ নিয়ে নতুন ভাঙন আটকানোর চেষ্টা করি।
“কিন্তু জোয়ারের প্রবল স্রোতে আটকানো সম্ভব হয়নি। বর্তমান জোয়ারের পানি লোকালে প্রবেশ করছে।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে বিছট, গোর আলী, বল্লভপুর, আনুলিয়া ও কাকবাসীর গ্রামে লবণ পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। দ্রুত বাঁধটি মেরামত না করা গেলে পাশের খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করবে।
“ভাঙনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে যাই। বেড়িবাঁধের প্রায় দেড়শ ফুট এলাকাজুড়ে সম্পূর্ণ খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।”
ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, “বিষয়টি আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন পয়েন্টে একটি বিকল্প বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।”
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, “ভাঙনের কথা শোনা মাত্রই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ-বস্তা যা লাগে দ্রুত ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছি।”
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিভাগ-২) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বেড়িবাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে আমার ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে সেখানে কাজ করছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগের ব্যবস্থা করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।”