“হাওরে যেভাবে পানি বাড়ার আভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে মাছের উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটা হাওরবাসীর জন্য আশীর্বাদ।”
Published : 08 May 2024, 12:29 AM
প্রকৃতির চোখ রাঙানির মধ্যেই হাওরের শতভাগ ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজ শেষ করেছেন কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনে খুশি কৃষক। এখন উপযুক্ত সময়ে পানি আসায় হাওরে দেশি মাছ উৎপাদন ‘বেশি’ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছর বর্ষা দেরিতে শুরু হওয়ায় হাওরে মাছ উৎপাদন কম হয়েছে। যার ফলে বাজারে দেশি মাছ কম এবং দাম বেশি দেখা গেছে।
এদিকে সুনামগঞ্জে গত দুদিন ধরে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে ভারতের মেঘালয়ে হাল্কা বৃষ্টিপাত হওয়ায় আপাতত বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। আগামী দুদিন ভারী বর্ষণে নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, গত বছর বর্ষা বিলম্বিত হয়েছিল। প্রায় দুই মাস পর হাওরে পানি এসেছিল। যে কারণে উপযুক্ত সময়ে হাওরের মিঠাপানির মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি; এতে মাছের উৎপাদন কিছুটা কমেছে। বাজারে মাছের দামও বেশি।
কিন্তু এবার উপযুক্ত সময়ে হাওরে পানি আসতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বৃষ্টি হচ্ছে; পানি বাড়ছে। এটা ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। এই মাস থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত হাওরের মিঠাপানির মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। উপযুক্ত সময়ে হাওরে, নদ-নদীতে এই পানি মাছের জন্য খুবই উপকার। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ কেটেও হাওরে পানি ঢুকানো দরকার।”
মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “খাদ্যের পাশাপাশি মাছ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হাওর। হাওরে উন্মুক্তভাবে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। পুকুরে উৎপাদন হয় আরও প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন মাছ; যার বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।”
“হাওরের মিঠা পানিতে মাছ প্রজননের সময় মে থেকে অগাস্ট পর্যন্ত। হাওরে যেভাবে পানি বাড়ার আভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে মাছের উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটা হাওরবাসীর জন্য আশীর্বাদ।”
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “এই মৌসুমে সুরমা নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। সোমবার রাত ৯টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীতে পানির প্রবাহ ৪ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার; যা স্বাভাবিকের চেয়েও নীচে আছে।”
গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ে মাত্র ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হলেই বন্যার আশঙ্কা বেশি থাকে বলে তিনি জানান।
মামুন বলছেন, “আগামী দুদিন ভাটি ও উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। বৃষ্টিপাত বেশি বা পাহাড়ি ঢল বাড়লেও ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। বিভিন্ন এলাকায় হাওরে পানি প্রবেশ করাতে স্লুইস গেইটও খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধও কেটে দেওয়া হবে।”
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলছিলেন, “দুই-তিনদিন আগেই হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওরে আবাদ করা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬১ হেক্টর ধানের সব কাটা, মাড়াই ও শুকানো হয়ে গেছে।
“এমনকি বেশির ভাগ কৃষক খড়ও শুকিয়ে সংগ্রহ করেছেন। তবে হাওরের বাইরে এখনও ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান রয়ে গেছে। ইরি প্রজাতির এই ধান কাটা শেষ করতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগবে।”
হাওরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “সম্পূর্ণ ফসলের সঙ্গে গবাদিপশুর প্রাকৃতিক খাদ্য খড়ও সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন কৃষক।”
হাওর আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেনরায় বলেন, “হাওরে গত বছর বর্ষা দেরি হওয়ায় মাছের উৎপাদন কমেছে। তবে এবার যথাসময়ে পানি আসতে শুরু করায় হাওরে বাম্পার ফলনের মতো মাছের উৎপাদনও বাড়বে।
“এই মৌসুমে যাতে ডিম ছাড়ার সময় হাওরে কেউ মাছ ধরতে না পারে, সেদিকে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে উজানের ঢল বৃদ্ধি পেলে বন্যায় দুর্ভোগও বাড়ার আশঙ্কা আছে।”
দেখার হাওরের জলমহাল ব্যবসায়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহিনুর রহমান বলেন, “এবার হাওরে দেশি মাছ কম ছিল। জলমহাল ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ মাছ পাননি। তবে এখন ধান কাটা শেষে বৃষ্টিপাত ও হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করায় আগামী মাছ আহরণের উপকার মিলবে। মাছও বাড়বে।”
তিনি বলেন, “এবার আমরা হাওরে বাম্পার ধান পেয়েছি। আশা করি মাছও বেশি পাব।”
জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন বলেন, এই মৌসুমে দেশি প্রজাতির মাছের দাম অত্যাধিক ছিল। বাজারেও মাছ কম ছিল। তবে এখন বৃষ্টিপাত হওয়ায় হাওরে পানি বাড়তে শুরু করায় মাছ ডিম পাড়তে সু্বিধা হবে।