ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী না কি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, বলেন ইউএনও।
Published : 11 Jun 2024, 06:17 PM
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে আবারও মিয়ানমার থেকে একটি স্পিটবোডকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মঙ্গলবারে সকালে উপজেলার নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে বলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান।
ওই স্পিডবোটের মালিক সেন্ট মার্টিন স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম।
তিনি বলেন, “চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে টেকনাফে আসা পাঁচজন যাত্রীর সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্রয়োজন হলে চালক মোহাম্মদ বেলাল সকাল সাড়ে ১০টায় টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট থেকে যাত্রা দেয়। বোটটি শাহপরীর দ্বীপ অতিক্রম করে নাফ নদীর বদরমোকামের ঘোলার চর পয়েন্টে পৌঁছে। এটি নাইক্ষ্যংদিয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের অংশ এলাকাটি।
“কিন্তু এরপরও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে ট্রলারে অবস্থানরত অস্ত্রধারী একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশের জলসীমায় এগিয়ে এসে গুলি করে। টানা ১০-১২টি গুলি করে তারা।”
খোরশেদ আলম বলেন, চালক বেলাল অবস্থা বুঝে স্পিডবোটটি দ্রুত চালিয়ে পশ্চিমের বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যায়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বোটটি দুপুর ১২ টার দিকে দ্বীপে গিয়ে পৌঁছে।
দ্বীপের এই জনপ্রতিনিধি বলেন, কাঠের ট্রলার বা সার্ভিস বোটে যাত্রী বা পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা রয়েছে। ট্রলারগুলোকে নাফনদী এবং বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এসে মিয়ানমারের কাছাকাছি এলাকা অতিক্রম করতে হয়। এটা করতে গিয়ে ৫ জুন সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনি সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি।
প্যানেল চেয়ারম্যান বলেন, “এরপর ৮ জুন শনিবারও পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি করে তারা। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি। কিন্তু স্পিডবোট অনেক দূর থেকে চলাচল করলেও কেন বাংলাদেশের জলসীমায় এসে গুলি করছেন বুঝা যাচ্ছে না।”
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, “টেকনাফের নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা কারা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা ট্রলারে অস্ত্র হাতে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছিলেন। আর কোনো ভাবেই সেন্ট মার্টিনগামী ট্রলার বা স্পিডবোট দেখলেই গুলি করছে।
“মঙ্গলবারের ঘটনার পর দ্বীপ জুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌ পথে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ। যার কারণে দৈনন্দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট হতে শুরু করেছে।”
সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজ যোগে খাদ্যপণ্য নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইউএনও আদনান বলেন, বিষয়টি সব পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে।
ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
“তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া বিষয় চিন্তা করা হয়েছিল।”
এ ব্যাপারে রোববার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবিহিত করা হয়েছে। এখন সেন্টমার্টিনে পণ্য পাঠানোর জন্য বঙ্গোপসাগরই ভরসা বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মিয়ানমার থেকে গুলি: সেন্ট মার্টিনে নৌ চলাচল বন্ধ, খাদ্যের সংকট
সেন্ট মার্টিন থেকে ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে ট্রলারে গুলি