শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
Published : 10 Jun 2024, 04:49 PM
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনায় ছয় দিন ধরে দ্বীপটিতে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফলে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সংকটে পড়েছেন।
এই দ্বীপের যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। প্রতিদিনই টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে এই দ্বীপের বাসিন্দারা আসা যাওয়া করেন ট্রলারে। একই সঙ্গে খাদ্য পণ্য পরিবহনেও ব্যবহৃত হয় ট্রলার।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ওয়ার্ড সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “সেন্ট মার্টিনে যারা দিন এনে দিন খায় আপাতত তারাই বেশি কষ্টে পড়েছেন। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্ট মার্টিনের দোকানগুলোতে মজুদ করা খাদ্যপণ্য প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
“তরিতরকারি, ডিম ও কাঁচা বাজারের বেশি সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।”
দ্রুত সমাধান না হলে এই দ্বীপবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
সেন্ট মার্টিনের টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আগামীকাল সকাল ১০টায় আমার ডিগ্রি ফাইনাল বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষা। কয়েকদিন ধরে সেন্ট মার্টিন পথে নৌযান চলাচল বন্ধ। এই অবস্থা পরীক্ষা দিতে যেতে না পারলে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের জেরে এখন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটের নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশি নৌযানকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে।
“এরই মধ্যে গেল ৫ জুন সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনি সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর শনিবারও পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি করে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি।”
সেন্ট মার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে বাংলাদেশি নৌযানকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি করে মিয়ানমার। ট্রলারে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে মানুষ ভয়ে যাচ্ছে না।
“তাছাড়া ওই পথ ছাড়া সেন্ট মার্টিনে আসার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা বা রুটও নাই। প্রতিদিন সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌ রুটে ছয়-সাতটি বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করা হয়।”
সেন্ট মার্টিনের ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আকতার কামাল বলেন, “টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংডিয়া এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে এই দ্বীপে যাতায়াত করা নৌযানগুলোতে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। যার কারণে মানুষ প্রাণের ভয়ে পারাপার করতে চাইছেন না।
“তবে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। গত কয়েক দিনে দুই-তিনটি বোটে এ রকম আক্রমণ চালানো হয়। পরে বোট চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা।”
এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্ট মার্টিনে দেখা দিচ্ছে, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। সমস্যা দীর্ঘ হওয়ার আগে যেন সরকার সমাধানের চেষ্টা করবে বলে আশা এই প্যানেল চেয়ারম্যানের।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
তবে জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
এর আগে গত বুধবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন থেকে নির্বাচনি কর্মকর্তা ও সরঞ্জাম নিয়ে ফেরা ট্রলারকে লক্ষ্য করে শতাধিক গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
তারপর শনিবার দুপুর ১টার দিকে নাফ নদীর বদরমোকাম মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে একটি পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন:
সেন্ট মার্টিন থেকে ভোটের সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে ট্রলারে গুল