ক্রেতারা তাদের সংগ্রহে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক স্টোরে জমা দিয়ে নিলেন চাল, ডাল, আটা, তেল, লবণ, ডিম, চিনি, বিস্কুটসহ পছন্দের ১৩টি পণ্য।
Published : 04 Nov 2024, 12:42 AM
নাম ‘প্লাস্টিক একচেঞ্জ স্টোর’। এ স্টোরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে ক্রেতারা পেলেন ১৩ প্রকারের নিত্যপণ্য। একজন ক্রেতা পণ্য কিনে টাকা না গুনে দিলেন তার সংগ্রহে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক।
প্লাস্টিকের ব্যবহার ও দূষণের বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে রোববার নীলফামারী শহরের আনন্দ বাবুর পুল এলাকার আশা কমিউনিটি সেন্টারে ব্যতিক্রমী এই ‘প্লাস্টিক একচেঞ্জ স্টোর’ স্থাপন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ব্যাতিক্রমী এ স্টোরের কার্যক্রম চলে।
বেলা ১১টার দিকে একটি বস্তায় করে ১৬ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক নিয়ে স্টোরে এলেন নীলফামারী পৌর শহরের নতুন বাজার মহল্লার বিলকিস বেগম (৩৫)।
ওইসব প্লাস্টিক স্টোরে জমা দিয়ে নিয়ে গেলেন চাল, ডাল, আটা, তেল, লবণ, ডিম, চিনি, বিস্কুটসহ পছন্দের ১৩টি পণ্য।
বিলকিস বেগমের মত চার শতাধিক নারী-পুরুষ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক নিয়ে পৌঁছে যান প্লাস্টিক একচেঞ্জ স্টোরে। বিনিময়ে নিয়ে যান পছন্দের নিত্যপণ্য।
তাদের মধ্যে জেলা শহরের সওদাগরপাড়ার রাবেয়া বেগম (৪০) ১৩ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে ওইসব পণ্য নিয়েছেন।
একইভাবে শহরের সবুজপাড়ার রুমা বেগম (২৫) নয় কেজি এবং শাহিপাড়ার আমিনুল ইসলাম (৫০) ১৩ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে স্টোর থেকে কিনেছেন পছন্দের পণ্য।
তারা সবাই প্লাস্টিকের বিনিময়ে পেয়েছেন পছন্দের নির্দিষ্ট পরিমানের পণ্য।
বিলকিস বেগম বলেন, সকালে তিনি খবর পান, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিলে ওই স্টোরে মিলবে চাল, ডাল, ডিম, তেলসহ নিত্যপণ্য। এমন খবরে বাড়িতে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের ভাঙা চেয়ারসহ পরিত্যক্ত জিনিস কুড়িয়ে একটি বস্তায় ভরে এই স্টোরে নিয়ে আসেন তিনি।
এখানের স্বেচ্ছাসেবীরা তার বস্তাটি ওজন দিলে ১৬ কেজি প্লাস্টিক পান। এতে তাকে দেওয়া হয় ১৬টি টোকেন।
ওই টোকেন জমা দিয়ে তিনি স্টোর থেকে চাল, ডাল, চিনি, আটা, সুজি, ডিম, তেল, লবণ, বিস্কুটসহ ১৩ রকমের পণ্য নিয়েছেন।
শাহিপাড়ার আমিনুল ইসলাম (৫০) বলেন, “১৩ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে আমার পছন্দের পণ্য ১৩টি পণ্য কিনেছি স্টোর থেকে।”
তিনি আরো বলেন, “পরিবেশ রক্ষা করতে হলে প্লাস্টিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে আমাদের প্রত্যেকের। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মত এমন উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।”
আয়োজকদের ভাষ্য, সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৃণমূলেও অনেক আন্দোলন ও সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এনজিও ও সুশীল সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা এবং প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প প্রচারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এই বাস্তবতায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একদিনের জন্য চালু করে ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ যেখানে প্রান্তিক মানুষের কুড়ানো বা জমানো প্লাস্টিক জমা দিয়ে পান নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী রানা আহমেদ বলেন, “প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে, এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা একেবারেই অসম্ভব। এই দূষণ কমাতে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতে আমরা সারাদেশে পর্যায়ক্রমে ‘প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর’ চালু করেছি।”
নীলফামারী জেলায় এক দিনের এই কার্যক্রমে আড়াই মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪ জেলায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান, প্রতি কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে স্টোরে সাজানো প্রতিটি পণ্যের পরিমান নির্ধারণ করা ছিল। ক্রেতারা পছন্দ করে পণ্য নির্ধারণ করেন।
এছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীরাও কুড়ানো নির্দিষ্ট পরিমান প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে পাচ্ছে শিক্ষা উপকরণ।