নাদিমের স্ত্রীর অভিযোগ, মামলার ৫ নম্বর আসামি গাজী আমর আলী মেম্বারসহ কয়েকজন জামিনে এসে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
Published : 29 Apr 2024, 05:39 PM
জামালগঞ্জের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার জামিনে থাকা কয়েকজন আসামি নাদিমের স্ত্রী ও পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এ হত্যাকাণ্ডের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও গ্রেপ্তার হয়নি মূল হত্যাকারী।
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে জেলা প্রেসক্লাব রোডে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও নিহতের স্ত্রী মনিরা বেগম।
মনিরা বলেন, “নাদিম হত্যাকাণ্ডের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার ২ নম্বর আসামি ও মূল হত্যাকারী ফাহিম ফয়সাল রিফাত পুলিশের ভাষায় পলাতক। কিন্তু তিনি ইসলামপুরে একটি বিয়ের দাওয়াতে গেছেন; প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরেও বেড়াচ্ছেন।
“এছাড়া মামলার ৫ নম্বর আসামি গাজী আমর আলী মেম্বারসহ কয়েকজন জামিনে বেরিয়ে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে মামলার কার্যক্রম ব্যাহতসহ তিন সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
এ সময় প্রশাসনের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা, সব আসামিদের গ্রেপ্তার এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান মনিরা।
মানববন্ধনে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদা বলেন, “পুলিশের সাবেক আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্না নাদিম হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি। তিনি বকশিগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বাবুর চাচাত ভাই হওয়ার সুবাদে মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
মামলাটি সিআইডি থেকে প্রত্যাহার করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সব হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানান তিনি ।
জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, “হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি জেলখানায় জামাই আদরে রয়েছে। জামিনে থাকা আসামিরা বাদীর পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বাদীর পরিবারকে নিরাপত্তা ও ১ নম্বর আসামিকে দেশের অন্য কোনো জেলখানায় স্থানান্তরের দাবি জানান।
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত জামানের অভিযোগ, “মামলার তদন্তকারী সিআইডি পুলিশ শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে চার্জশিট দাখিলের চেষ্টা করছে। ভিডিও ফুটেজের বাইরে মূল হত্যাকারী মাহমুদুল হাসান বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতকে বাঁচানোর অপচেষ্টা চলছে।
“আইনমন্ত্রী মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।“
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির এসআই গোলাম কিবরিয়া মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, “মামলার তদন্ত কাজ শেষ দিকে। দ্রুতই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা ঠিক হবে না, তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
জেলা কারাগারের জেলার আবু ফাতাহ বলেন, “সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুসহ ১৭ জন বর্তমানে কারাগারে আছে। একজন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং বাকিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।”
গত বছরের ১৪ জুন রাতে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির উপজেলা প্রতিনিধি নাদিমকে পিটিয়ে ফেলে রেখে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে সাধুরপাড়া ইউপির বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুরনো খবর:
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে পরিবারের অনশন
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার ৩ আসামি কারাগারে
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা: বাবুসহ ৬ আসামির জামিন নাকচ
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: বাবু চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের জামিন নামঞ্জুর
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: কুড়িগ্রাম থেকে এক আসামি গ্রেপ্তার
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতাকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ