দুই উপজেলা সদরে নির্মাণাধীন দুটি ফ্লাইওভার ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
Published : 24 Mar 2025, 09:01 AM
ছয় লেনের ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ধরে উত্তরের পথে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির কারণ হতে পারে গাইবান্ধা অংশে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী সদর।
এ দুই উপজেলা সদরে নির্মাণাধীন দুই ফ্লাইওভার স্বস্তির ঈদযাত্রায় বাগড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পান্তাপাড়া থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার।
এর মধ্যে উপজেলার চতুরঙ্গ মোড় থেকে হিরক মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, পলাশবাড়ী উপজেলা শহরের থানা মোড় থেকে মিতালি হোটেল মোড় পর্যন্ত প্রায় দশমিক ৬ কিলোমিটার এলাকাতেও ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
দুই উপজেলা সদর পার হতে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলায় মূল রাস্তা বন্ধ আছে। ওই অংশে শুধু দুই পাশের দুইটি সার্ভিস লেন দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের গাড়ি চলাচল করছে।
ফলে ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বেড়ে এ দুই জায়গার যানজট ছড়িয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা।
তবে এসব বিষয় মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন হাইওয়ে পুলিশসহ যানবাহনের শৃঙ্খলা ও মহাসড়ক দেখভালে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা।
এ পথে চলাচল করা একটি পরিবহনের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুর অংশে প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ফলে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে যানবাহনগুলো দ্রুতই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢুকে পড়ে।
“আবার দিনাজপুর-রংপুরসহ উত্তরের আট জেলার যানবাহনও দ্রুত গতিতে পলাশবাড়ী শহরে চলে আসে। কিন্তু গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহর ও পলাশবাড়ী উপজেলা শহরে ছয় লেনের সম্প্রসারণের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে।”
তিনি বলেন, “এই দুই উপজেলা সদরের অংশটুকুতে গাড়িগুলো পাশের দুই লেন দিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। এতে সবসময় উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়।
“ঈদের সময় যেহেতু ঘরমুখো মানুষদের বহন করা গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে, তখন যানজট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”
একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এই মহাসড়কে চলাচল করা আশরাফুল ইসলাম নামে আরেক বাসচালক।
ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটার পড়েছে গাইবান্ধা জেলায়।
এ পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর এলাকার তানজিমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “প্রায় সময় যানজটের কারণে গোবিন্দগঞ্জে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ঈদে এই যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।”
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী গোপাল মোহন্ত বলেন, “গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ভেকু ও সিমেন্ট মিকচার মেশিন এবং বালু, রড, পাথর পরিবহন ট্রাকের কারণে এই অংশে প্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদে এ মহাসড়কে বাড়তি পরিবহনের চাপ থাকবে। এ কারণে এই অংশের যানজট ঈদে বাড়ি ফিরতি মানুষজনকে ভোগাবে।”
পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের গৃরিধারীপুর এলাকার মো. তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডলের ভাষ্য, “উপজেলা সদরে কিছু অংশে ফ্লাইওভার ও কিছু অংশে ছয় লেন সড়কের নির্মাণ কাজ অব্যাহত আছে। এ কারণে এ অংশে প্রায় যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদে এ যানজট আরো বাড়তে পারে।”
পলাশবাড়ী উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী মোমেনুর রশিদ সাগর বলেন, “একদিকে নির্মাণ কাজ চলমান। অন্যদিকে মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজে অধিগ্রহণকৃত শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে সড়কের পাশে কংক্রিটের জঞ্জাল রেখে দেওয়া এবং দুই পাশে মহাসড়ক খুঁড়ে মাটি ঢিবি করে রাখার কারণে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। পথচারীরাও সড়ক পারাপার হতে পারেন না। এসব কারণে প্রায়ই যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। ঈদযাত্রায় ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে।”
গোবিন্দগঞ্জে মহাসড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঢেউটিন দিয়ে ঘেরাও করে কাজ শুরু হয়েছে।
এ ছাড়া পলাশবাড়ীতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে।
এই দুই জায়গায় ফ্লাইওভারের দুই পাশে সরু সড়ক দিয়ে বর্তমানে যানবাহন যাতায়াত করছে।
ফলে ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে ও পলাশবাড়ী সদরে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকে। আসন্ন ঈদে এই দুই জায়গায় ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, “গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীর যানজটের বিষয়টি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই দুই জায়গায় হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বিত ১০টি করে টিম কাজ শুরু করেছে।”
একই কথা জানিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা পুলিশের (ট্রাফিক) পরিদর্শক শাহ আলম।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, “ঈদে যেন গোবিন্দগঞ্জ যানজটমুক্ত থাকে এবং উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য পান্তাপাড়া থেকে গোবিন্দগঞ্জ মহিলা কলেজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কে হাইওয়ে পুলিশ, থানা ও জেলা পুলিশের ৩০ থেকে ৪০ জন সদস্য কাজ করবেন।”