এর আগে ছাত্র-জনতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ‘সেরনিয়াবাত ভবন’ভেঙে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
Published : 06 Feb 2025, 12:36 PM
বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে জনতা।
বুধবার রাত ২টার দিকে সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে নগরীর বগুড়া রোডের বাড়িটিতে ভাঙচুর শুরু করা হয়। রাত ৩টার দিকে ভাঙচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও জনতা নগরীর কালীবাড়ী রোডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়িটিও বুলডোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দেয়। তারপর সেখানেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে কালীবাড়ী রোডে এসে পুলিশ অবস্থান নেয়। রাত ১২টার দিকে সেনাবাহিনীরি সদস্যরাও সেখানে আসেন। একই সময় ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে কালীবাড়ি রোডের ‘সেরনিয়াবাত ভবন’ এর দিকে এগোয়।
এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়কের দুইপাশ থেকেই প্রবেশে বাধা দেয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ভবনের ভেতর প্রবেশ করে।
৫ অগাস্ট ভাঙচুর ও লুটপাট হওয়া ‘সেরনিয়াবাত ভবন’-এ কেউ থাকত না। এ সময় বাসভবনের দ্বিতীয় তলা ও ছাদে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা তা অল্প সময়ের ব্যবধানে নিভিয়ে ফেলে। পরে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী ভাঙচুর চালানো হয়।
পরে শিক্ষার্থীরা বুলডেজার নিয়ে বাসভবনের সামনের অংশ, গাড়ির গেরেজ ও শেডের অংশবিশেষ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় জনতাও অংশগ্রহণ করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “দেশের মানুষ বর্তমানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। তবে দেশের বাহিরে থেকে খুনি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পাঁয়তারা করছে। তারা মনে করেছে ছাত্র-জনতা ঘুমিয়ে গেছে। তাই আজ দেশ থেকে ফ্যাসিস্টদের মূল উৎপাটনে জনগণের টাকায় বানানো তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে।”
“কালীবাড়ি রোডের বাড়িটি ছিল আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহর টর্চারসেল। মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্যাতন করা হত। তাই জনগণের ক্ষোভ এতটাই ছিল যে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে পুলিশ-সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।”
এদিকে কালীবাড়ি রোডের ‘সেরনিয়াবত ভবন’ ভাঙচুরের পর রাত দেড়টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নগরীর বগুড়া রোডে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনেও ভাঙচুর চালায়।
সেখানে একটি টিনের ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি লাগোয়া একতলা ভবনের সামনের অংশ এবং পাশের দোতলা ভবনের সামনের অংশ ভাঙা হয়। পরে উঠানের সীমানা প্রাচীর ও বাড়ির সামনের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বুলডোজার দিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় ভেতরে থাকা বিভিন্ন মালামাল বাড়ির সামনে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু মানুষ ওই সময় বিভিন্ন মালামাল লুট করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা দেয়।
রাত ৩টা পর্যন্ত সেখানে এ কর্মকাণ্ড চলে। এরপর শিক্ষার্থীরা বুলডেজার নিয়ে চলে যায়।
নাঈম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “কালীবাড়ি রোড ও বগুড়া রোডের এ ভবন ফ্যাসিবাদের আস্তানা। আমরা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো আস্তানা রাখতে চাই না। তাই বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম শাহেদ সাংবাদিকদের বলেন, “বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের আস্তানা ভেঙে দিচ্ছে।”