Published : 26 Sep 2022, 12:45 AM
আগামী তিন বছরের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে চা রপ্তানির আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম।
রোববার বোর্ডের শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটে (পিডিইউ) চা উৎপাদন ও ব্যবসায় জড়িতদের দক্ষতা উন্নয়নে সাত দিনের ‘টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে আশরাফুল ইসলাম একথা বলেন।
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে প্রত্যেক বছরই চা উৎপাদনের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত বছর দেশে চা উৎপাদন হয় ৯৫ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন কেজি; যা ২০২০ সালের চেয়ে এক দশমিক ১১ মিলিয়ন কেজি বেশি। চলমান বছরের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ মিলিয়ন কেজি।
“আগামী তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালে চায়ের উৎপাদন হবে এক লাখ ৪০ হাজার মিলিয়ন কেজি। এ অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৯০ লাখ মিলিয়ন কেজির ভেতরে থাকতে হবে, বাকি চা রপ্তানি করতে হবে।”
এক সময় চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো জানিয়ে তিনি বলেন, “শিগগিরই আমরা চায়ের আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন চায়ের উৎপাদন ক্রমবর্ধমান পর্যায়ে আছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় আমাদের চায়ের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। আমরা এখন চিন্তা করছি, চা রপ্তানির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছি। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে কোয়ালিটি চা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই।”
বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, “আমাদের টি প্ল্যান্টারসরা টি টেস্টিং বিষয়টি ইনফরমালি শিখে থাকেন। এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স করানোর জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়ে দুটি কোর্স সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে। গুণগতমানের চা উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কোর্সটি চলমান রয়েছে।”
কোর্সে অংশ নেওয়ারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টি টেস্টিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করে তিনি।
পিডিইউয়ের পরিচালক একেএম রফিকুল হক বাবলুর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম।
অন্যদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের কমিটির সদস্য তাহসিন আহমেদ চৌধুরী, ফিনলে ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার জিএম শিবলী, জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা, সাতগাঁও চা বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত সিনিয়র প্লান্টার্স, বিভিন্ন টি ভ্যালির চেয়ারম্যানরা, ব্রোকার্স হাউজের টি টেস্টার এবং বিটিআরআই ও পিডিইউয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১২০ জন ব্যক্তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসমাইল হোসেন বলেন, “টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্সটি সত্যিকার অর্থে টি ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এখন পর্যন্ত ২৩টি চায়ের জাত আবিষ্কার করেছে। এই চা দিয়ে ব্ল্যাক টির পাশাপাশি উদ্ভাবন করা হয়েছে হোয়াইট টি, অর্থডক্স, গ্রিন টি, মাসল্লাটি, সাতকরা টি, তুলসি টি, ইংলিশ ব্রেকফাস্ট টি, ইংলিশ আফটারনোন টি, লেমন টি, ইয়েলো টিসহ আরো বেশ কিছু প্রকারের চা।”
বাংলাদেশের চা বিশ্ব বাজারে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই তার কোয়ালিটি ধরে রাখার পাশাপাশি ভিন্ন স্বাদের চা উদ্ভাবন করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “চা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান এ রকম বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা এর সফলতাও পাচ্ছি।”
চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক একেএম রফিকুল হক বাবলু জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬৭টি চা বাগান এবং প্রায় আট হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি আছেন। ওইসব চা বাগানের মোট আয়তন দুই লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ দশমিক ৬৩ একর; যার মধ্যে চা চাষিদের জমির পরিমান এক লাখ ৫৪ হাজার ৫১৫ দশমিক ৭৯ একর।
তিনি বলেন, গুণগত মানের চা উৎপাদন এবং উৎপাদিত চায়ের মান যাচাইয়ের জন্য দক্ষ টি টেস্টার তৈরির লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক এ কোর্সের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট।
ইতোমধ্যে দুটি কোর্স শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোর্সে অংশ নেওয়া বাগানের ম্যানেজার ও সহকারী ব্যবস্থাপকরা গুণগত মানের চা উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন।”
বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম বলেন, “টি টেস্টিং কোর্সটি একটি সময় উপযোগী কোর্স এবং আমি বিশ্বাস করি, কোর্সটি সম্পন্ন করার পর অংশগ্রহণকারীরা টি টেস্টিং-এর বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হবে এবং চা শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।”
তিনি বলেন, “শিল্প রাষ্ট্রের সম্পদ, এটিকে উন্নয়ন করলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন হবে। এ শিল্প ধ্বংস হলে রাষ্ট্র, মালিক এবং শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
চা সংসদের সদস্য তাহসিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, “বিভিন্ন চা বাগানের ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপকরা, যারা চা উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্সটি তাদের জন্য উন্নত মানের চা উৎপাদন সহজতর করবে।
এ সময় তিনি গুণগতমানের চা উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।