‘ফেনী আলকেমি হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান।
Published : 04 Mar 2025, 05:52 PM
ফেনীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘চিকিৎসার অবহেলায়’ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এনেছেন স্বজনরা। তারা এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশকে অভিযোগ দিয়েছেন।
সোমবার রাতে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক সংলগ্ন ‘ফেনী আলকেমি হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ জমা পড়েছে বলে ফেনী সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান।
পারুল আক্তার নামের ৪৫ বছর বয়সী ওই নারী ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার দুধমুখা এলাকার চণ্ডিপুর গ্রামের আজাদ হোসেনের স্ত্রী। রোববার তিনি মারা যান।
তার মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার অভিযোগে বলেন, জরায়ুতে অস্ত্রোপচারের জন্য তার মা পারুল আক্তার ১০ ফেব্রুয়ারি আলকেমি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিন হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক মাহবুবা খানম অপারেশন করেন।
রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দুদিন পর ফের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসকের পরামর্শের রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার আগে কুমিল্লা মেডিকেলের চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, পারুল আক্তারের অপারেশন ভুলভাবে হয়েছে বলে কুমিল্লার হাসপাতালের চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের জানান। জরায়ু অপারেশনের সময় রোগীর মলাশয়ের রাস্তা কেটে যায় এবং মল শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে পুরো শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
এ কারণে ফের তার অপারেশন করা হয়। কিন্তু ২ মার্চ রাতে মারা যান পারুল।
তার ভাগ্নে ও অভিযোগের সাক্ষী বদরুল ইসলাম রবিন বলেন, “আলকেমি হাসপাতালের মত একটি হাসপাতালে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক নেই। ডাক্তার মাহবুবা অপারেশনের সময় তিন থেকে চারবার ওটি থেকে বেরিয়ে মোবাইলে কথা বলেছেন। তার অবহেলায় ও এমবিবিএস চিকিৎসক ছাড়া হাসপাতাল পরিচালনা করায় রোগীর এমন মৃত্যু হয়েছে।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলকেমি হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক মাহবুবা খানম বলেন, “রোগীর অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল। মলাশয়ের কোথাও কোনো রকমের ছিদ্র হয়নি। শরীরের কোনো অংশে মল প্রবেশ করা সম্ভাবনা নেই।
“তার শরীরে আগে থেকে ইনফেকশন থাকায় রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে। রোগীর সমস্যা দেখা দিলে আমরা রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করি। রোগীর স্বজনরা কোথায় কী অভিযোগ দিয়েছে বিষয়ে আমি অবগত না।”
এ ব্যাপারে ফেনী আলকেমি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান বিকালে বলেন, “দুপুরে থানা থেকে পুলিশের একটি দল হাসপাতালে এসে তদন্ত করেছেন। ঘটনা যেদিন ঘটে সেদিন আমি কক্সবাজারে ছিলাম।
“বিষয়টি যেহেতু চিকিৎসক নির্ভর, ফলে তার সঙ্গে কথা বললেই বিস্তারিত জানা যাবে। ফেনীর একমাত্র প্রতিষ্ঠান আলকেমি হাসপাতাল যেখানে তিনজন এমবিবিএস ডাক্তার প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।”
ফেনীর সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন অভিযোগ গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে বলেন, “আমি আগামীকাল নতুন সিভিল সার্জনের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেব। নতুন সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবগত করে যাব এবং তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যেহেতু আমি বিদায় নিচ্ছি সেহেতু নতুন করে আর একদিনের জন্য আমি কোনো তদন্ত কমিটি করছি না।”
ফেনী সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, “নিহতের এক আত্মীয় এসে একটা লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। আমরা নিহতের রক্তের সম্পর্কের কাউকে আসতে বলেছি।
“চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আবার দাফনও করে ফেলেছে। তার মরদেহের কোনো ময়নাতদন্ত করেনি। আমরা সবদিক বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি।”