তার দলের নেতারা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
Published : 04 Nov 2024, 01:17 AM
পটুয়াখালীতে সন্তানের ডাকা সালিশে মারধরে বৃদ্ধ বাবার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলার দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেহালগঞ্জ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৬৮) ওই গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর সন্তানসহ সালিশদারা পালিয়ে গেছেন।
নিহতের মেয়ে কহিনুর বেগম বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে দশমিনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান ওসি মো. আবদুল আলীম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাদী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কাইয়ুম গাজীসহ মোট ছয়জনকে আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতিও চলছে।
কহিনুর বেগম ও সালিশ বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে শাহজাহান হাওলাদার বসতবাড়ি করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে তার বাবার কাছে জমি লিখে নেওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। কিন্তু নুরুল ইসলাম জমি লিখে দিতে রাজি হননি।
বহরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাদের বিষয়টি জানান ছেলে শাহাজান হাওলাদার।
পরে শাহজাহান, স্ত্রী রুনু বেগম, তার ভাই রিপনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে স্থানীয় নেতাদের সালিশ করতে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
কহিনুর বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই শাহজাহান বাড়ি করতে চাইলে এর আগে আব্বা তিনটি জমির যেকোনো একটিতে জায়গা দিতে চায়। কিন্তু ভাই রাস্তার পাশের জমি চাইলে আব্বা দিতে রাজি হননি। কারণ, রাস্তার পাশের জমিতে চাচাদেরও ভাগ আছে।
“এরপর রোববার সকালে ভাই শাহজাহান ও তার স্ত্রী রুনু বেগম ও তার ভাই রিপন মিলে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সালিশের কথা বলে বাড়িতে নিয়ে আসেন।”
স্থানীয়রা জানান, তখন নুরুল ইসলাম পাশের দোকানে ছিলেন। তারা স্থানীয় চৌকিদার দিয়ে তাকে ডেকে পাঠান।
বৃদ্ধ আসতে না চাইলে ৭-৮ জন মিলে তাকে বেধড়ক মারতে থাকেন। প্রাণ বাঁচাতে নুরুল ইসলাম পাশের ডোবায় ঝাপ দেন।
পরে স্থানীয়রা তাকে ডোবা থেকে তুলে দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক রাহুল বিন হালিম বলেন, “নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাকে মারধর করা হয়েছিল।”
নিহত নুরুল ইসলামের ছোট ভাই রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, “নেতাদের মাইর সহ্য করতে না পেরে ভাই আমার পাশের ডোবায় ঝাপ দেয়। পরে ভাইয়ের দেহ টেনে তোলার পর দেখি, তিনি কোনো শব্দ করে না। তখন আমি চিৎকার করি, আমার ভাইকে মাইরা ফালাইছে। তখন নেতারা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।”
নিহত নুরুল ইসলামের মেজো ও ছোট ছেলের দুই বউ সাথী বেগম ও চাঁদনী বেগমের অভিযোগ, সালিশদাররা মিলে তাদের শ্বশুরকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে।
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা বিএনপি নেতাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। নিহত নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে শাহজাহানের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম শানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৭ নভেম্বরের প্রোগ্রাম নিয়ে আমি উপজেলা বিএনপি অফিসে মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় কয়েকজন আমাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি শালিস বৈঠক না করার জন্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আছে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যদি কেউ জড়িত থাকে, তাহলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তাদের দায় দল কখনও নেবে না। তবে বিএনপির কোনো নেতা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”