কেন্দ্রে না যেতে ভোটারদের হুমকি-ভয় দেখানো হচ্ছে: তানিম

সংসদ সদস্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মেয়ের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন- এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে এরই মধ্যে অভিযোগও দিয়েছেন তানিম।

আবদুর রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 10:01 AM
Updated : 8 March 2024, 10:01 AM

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে একটি পক্ষ হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র পদপ্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম।

মহানগর আওয়ামী লীগের এ উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি যদি নির্বাচিত হন তাহলে যানজট ও জলাবদ্ধতাকে প্রাধান্য দিয়ে নগরীর উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। 

তানিম ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আশির দশকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি-জিএস ছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রের কমিটিতেও ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। এক সময় তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন।

কুমিল্লা পৌরসভা ভেঙে সিটি করপোরেশন গঠনের পর প্রথম নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তানিম। যদিও সেবার তিনি জনরায় পাননি। নগরীর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার রাজনৈতিক ভিত্তি রয়েছে। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি জড়িত।   

কুমিল্লার রাজনীতিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরোধী বলয়ের লোক হিসেবেই পরিচিত তানিম। সংসদ সদস্যের মেয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনাও এবার নির্বাচনের মাঠে আছেন।

সংসদ সদস্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মেয়ের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন- এমন অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে এরই মধ্যে অভিযোগও দিয়েছেন হাতি প্রতীকের প্রার্থী তানিম। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা সংসদ সদস্য বাহারকে চিঠি পাঠিয়ে প্রচার না চালাতে অনুরোধ করেছেন।  

৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই নেতা ছাড়াও বিএনপির সাবেক দুই নেতা লড়াইয়ের ময়দানে আছেন। তারা হলেন সাবেক দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সার।

ভোটের শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ততার মধ্যেও নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। 

প্রশ্ন: প্রচারের প্রায় শেষ মুহূর্তে চলে এসেছেন; এবার ভোটের মাঠের পরিবেশ কেমন দেখছেন?

নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম: ভোটের মাঠের পরিবেশ এখনও সেরকম আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি। তবে একটি পক্ষের তোড়জোড় এবং অপতৎপরতা দ্রুত ভোটের পরিবেশকে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কঠোর পদক্ষেপ আশা করি।

তবে কেন জানি মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন দেখেও দেখছে না, বুঝেও বুঝছে না। মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ছিল- কিন্তু প্রচার চলাকালে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।  

প্রশ্ন: আগেও নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে আপনার। এবার সাধারণ ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

তানিম: নির্বাচনের মধ্যদিয়েই আমার সৃষ্টি। ভিক্টোরিয়া কলেজে চারবার ভিপি-জিএস হয়েছি। বিগত সময়ে নিজে নির্বাচন করেছি এবং অনেকের নির্বাচনে সাহায্য করেছি। এবারের নির্বাচনে জনগণের রায়টা মনে হচ্ছে আমার দিকেই ঘুরবে। কারণ যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই সাধারণ মানুষ তাদের মনের আকুতি আমাকে জানাচ্ছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়।

প্রশ্ন: আপনার নেতাকর্মী-সমর্থকদের হয়রানি-হুমকি দেওয়া হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ কি পেয়েছেন?

তানিম: বিচ্ছিন্নভাবে আমার নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে টুকটাক এসব হুমকি আসাটাই স্বাভাবিক। প্রভাব দেখিয়ে একটি লোক নিজের অবস্থানকে জানান দিতে পারে এটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের আরও একজন নেতা নির্বাচন করছেন, আপনিও আওয়ামী লীগের। ভোট ভাগ হয়ে যাওয়াটা আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর হবে?

তানিম: মানুষ এই নির্বাচনকে দলীয় হিসেবে দেখছে না। প্রার্থীকেও দলের লোক হিসেবে দেখছে না। সাধারণ মানুষ এই নির্বাচনকে ব্যক্তির নির্বাচন হিসেবেই দেখছে। আপনি গত ৩০-৪০ বছর কী করেছেন কুমিল্লার জন্য- এ বিষয়টিকে কুমিল্লা মানুষ প্রাধান্য দিচ্ছে। ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডই এই নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর। 

প্রশ্ন: বিএনপির ভোটও ভাগ হবে। সেটা কি আপনাকে কোনো সুবিধা দেবে?

তানিম: যদি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হিসাবে সমীকরণে যান- তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা পাওয়ার কথা। তবে আমি আগেই বলেছি, এ নির্বাচনকে কুমিল্লার মানুষ দলীয়ভাবে দেখছে না। 

প্রশ্ন: জাতীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। সরকারের এই লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে করেন?

তানিম: এখানে সরকারের লক্ষ্য যাতে পূরণ না হয়- সেজন্য সরকারের লোক দাবি করেন যারা, তারাই তো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারাই ভোটারদের হুমকি এবং ভয় দেখাচ্ছেন কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য। তারা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে ভোটারদের বোঝাতে চাইছেন যে, কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিয়ে কোনো লাভ হবে না, নির্দিষ্ট ব্যক্তিই বিজয়ী হবেন।

প্রশ্ন: সিটি নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এখানে শুধু মেয়র প্রার্থী- সেটা কি ভোটার উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে?

তানিম: অবশ্যই ভোটার উপস্থিতির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে চারজন প্রার্থীই এ শহরের পরিচিত মুখ। চারজনের সঙ্গেই কমবেশি জনগণের সম্পৃক্ততা রয়েছে, দলীয় পরিচয় রয়েছে। সবাই যদি নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন- তাহলে ভোটকেন্দ্র উৎসবমুখর হয়ে উঠবে।

প্রশ্ন: ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা- এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ‘শঙ্কা’ আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

তানিম: নির্বাচন কমিশন যদি আজকের দিনেও মনে করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করবে এবং ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে শঙ্কামুক্ত রাখবে সেটা সম্ভব। এজন্য নির্বাচন কমিশনের কয়েকটি পদক্ষেপই যথেষ্ট। বিশেষ করে ভোটের শেষ সময় পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে তৎপর থাকতে হবে।

যদি কেউ দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়- তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এমন কয়েকটি পদক্ষেপ নিলেই ভোটারদের সব শঙ্কা দূর হয়ে যাবে। এ ছাড়া এরই মধ্যে নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। এজন্য তারা দলে দলে কেন্দ্রে যাবেন।    

প্রশ্ন: মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম কোন সিদ্ধান্তটা নেবেন?

তানিম: মেয়র নির্বাচিত হলে আমার প্রথম সিদ্ধান্ত হবে কুমিল্লা নগরীর যানজট দূর করা। দ্বিতীয়ত, কুমিল্লাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পাবে আমার কাছে। আমি প্রথমদিন থেকেই চেষ্টা করব নগরবাসীকে স্বস্তিতে রাখার।

প্রশ্ন: ভোটের ফলাফল যাই হোক, মেনে নেবেন কিনা?

তানিম: ভোটের ফলাফল মেনে নেব কিনা, সেটা নির্ভর করছে ভোটের দিনের পরিস্থিতর ওপর। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল যা-ই হোক আমি নেবে নেব। 

প্রশ্ন: ভোটের ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 

তানিম: আপনাকেও ধন্যবাদ।