পার্কে ঘুরে মনে হয়েছে, কিছু প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুরূপ পরিবেশ পেলেও অনেক প্রাণীর জীবনমানই পর্যাপ্ত নয়, বলেন উপদেষ্টা।
Published : 09 Apr 2025, 08:34 PM
গাজীপুরে সাফারি পার্কের অব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেছেন, “পার্কে ঘুরে মনে হয়েছে, কিছু প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুরূপ পরিবেশ পেলেও অনেক প্রাণীর জীবনমান পর্যাপ্ত নয়। কিছু হাতি ও জাগুয়ারের আচরণগত অস্বাভাবিকতা উদ্বিগ্ন হয়েছি।”
বুধবার দুপুরে গাজীপুর সাফারি পার্ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এই পার্ক দর্শণার্থীদের জন্য শুধু বিনোদনের নয় বরং প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা শেখার স্থান হওয়া উচিত।
এ পার্কে হাতিশালা, জাগুয়ার বেস্টরি ও লেমুর বেস্টনিগুলোতে সেই পরিবেশ রাখা হয়নি বলে পরিদর্শন শেষে জানান তিনি।
সম্প্রতি প্রাণী নিখোঁজের ঘটনায় উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “একটি লেমুর হারিয়ে গেলে মানে বুঝতে হবে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে।
“দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে আমি সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি চিহ্নিত করেছি।”
এই পার্ক থেকে একের পর এক লেমুরের মত দুর্লভ প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, “এসব দুর্লভ প্রাণী কিভাবে চুরি হল, এটি খোঁজে বের করতে হবে।
“আমি মনে করি, এখানে যারা দায়িত্বে আছেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন, ঘটনার আগে ও পরে তাদের ভূমিকা দেখতে হবে।”
একই ঘটনা যখন একাধিকবার ঘটছে, তখন কেন এসব স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়নি, সিসি ক্যামেরা কেন কাজ করেনি? এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আপনি যখন ঘটনার ১৪ দিন পর মামলা করবেন তখন তো এসব হারিয়ে যাওয়া প্রাণী ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।
“কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে, বিলুপ্ত যে সব বন্যপ্রাণী এখানে এনে আমরা রাখছি সে সব হারিয়ে যাচ্ছে, এটি খোঁজে বের করতে হবে।
“গাজীপুর সাফারি পার্কের দুর্লভ প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। শুধু চাকরিচ্যুতি নয়, এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের গাফিলতি করার সাহস না পায়।”
তিনি বলেন, “এছাড়া আজ একটি বিষয় প্রমাণিত, একটি সংঘবদ্ধ চক্র আছে, যারা বাংলাদেশকে বন্যপ্রাণী পাচারের রোড হিসেবে ব্যবহার করে।”
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয়, পার্ক ব্যবস্থাপনাটা আরো অনেক উন্নত করতে হবে। এটাকে প্রাণীবান্ধবও দর্শণার্থীবান্ধব করতে হবে। এখানে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবের পাশাপাশি জনবল সংকট আছে।
তিনি জানান, স্বচ্ছতা আনতে বন্যপ্রাণী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সরকারি প্রকল্প এলেই শুধু কাজ করবেন, এমনটা হতে পারে না। সাফারি পার্ক একটি জাতীয় সম্পদ। এর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত বরাদ্দ ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।”
তিনি জানান, হাতিদের জন্য শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে এবং ক্যাপটিভ হাতিদের কল্যাণে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, যারা গাজীপুরে থাকেন, তাদেরই প্রথম দায়িত্ব নিতে হবে, এই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য। প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধ, অবৈধ পাখি বিক্রি বন্ধ ও নিখোঁজ প্রাণী উদ্ধারে প্রশাসনের পাশাপাশি জনসচেতনতাও জরুরি।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক সানাউল্লাহ পাটোয়ারী, সেন্ট্রাল সার্কেলের বন সংরক্ষক এএসএম জহির উদ্দিন আকন, গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ছিলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করেন এবং বন বিভাগের চম্পা সম্মেলন কক্ষে গাজীপুরস্থ বন অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।
তিনি এ সময় গাজীপুর পরিবেশ ও বন সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
তিনি কর্মকর্তাদের কাছে সমস্যার কথা শোনেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।