প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নদী তীরবর্তী কৃষিজমির অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে।
Published : 02 Oct 2024, 12:30 PM
মানিকগঞ্জের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার ১২টিই এর মধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট গৌড়বড়দিয়া মৌজার বাসিন্দারাও এখন নদীগর্ভে সর্বস্ব হারানোর আতঙ্কে আছেন।
সম্প্রতি হরিরামপুর উপজেলার এ ইউনিয়নের ২ নম্বর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মালুচি ও কুশিয়ারচরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নদী তীরবর্তী কৃষিজমির অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে।
এসব এলাকায় নদীর গভীরতা বেশি হওয়ায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র স্রোত তৈরি হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে কুশিয়ারচর গায়েনবাড়ি মসজিদ, হোসেন শাহের মাজার ও মালুচি মসজিদসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুশিয়ারচর এলাকার ফৈজদ্দীনের বাড়ি, বেলায়েত মেম্বার, নুরুল, বনি, রাকিব, বারেক গাজী, আঈয়ুব খাঁ, গেন্দু বেপারী, বিশু বেপাড়ী, লালন, জিয়াউর মেম্বারের বাড়ি এবং মালুচি এলাকার শাহাজদ্দীন, লালমিয়া, আখিজদ্দিন ও ফুলুর বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।”
দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বাড়িগুলো পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে বলে শঙ্কার কথা জানান তিনি।
মঙ্গলবার সকালে ভাঙনকবলিত এলাকায় সরেজমিনে গেলে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শামিম গাজীর সঙ্গেও।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে এ ইউনিয়নের ৭০-৭৫ শতাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত তিন বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকানিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর ভেঙে গেছে।
“নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত ১০-১৫ দিন ধরে কুশিয়ারচর থেকে শিবালয় উপজেলা শুরুর প্রান্তে মালুচী ঘাট এলাকায়ও ভাঙন দেখা দেয়। তীব্র স্রোত এবং ঢেউয়ের আঘাতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগসহ কয়েক জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে।”
কুশিয়ারচর গ্রামের বেলায়েত মেম্বার (৪৫) বলেন, “আমাদের বাড়িটি ১২০ শতাংশের বেশি বড় ছিল। কিন্তু এর ৭০-৮০ শতাংশই ভেঙে গেছে। একটি পাম ওয়েল গাছসহ বাড়ির কিছু অংশও ভেঙে গেছে।”
দ্রুত সময়ে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ছিল, তাও ধসে গেছে। একটা স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই আমরা।"
একই গ্রামের কৃষক ফয়েজউদ্দীনের বাড়ি ছিল কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাগমাড়ায়। পদ্মার ভাঙনে দুইবার বাড়ি ভাঙার পর ৬-৭ বছর আগে কুশিয়ারচর এলাকায় এসে বাড়ি করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি কৃষি কাজের পাশাপাশি মাছও ধরি। কুশিয়ারচর এসে অনেক কষ্টে একটা ঘর দিলাম। আর কয়েক চাপ মাটি পড়লেই আমার ঘরডা পদ্মায় চলে যাইবো।”
মালুচি এলাকার আখিজদ্দীন বলেন, “এখানে মালুচিতে বস্তা না ফেললে আমার বাড়ি ও কুশিয়ারচরের কয়েকটি বাড়ি যেকোনো সময় ভেঙে যাবে।”
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে ১৩টি মৌজার ১২টি মৌজাই এর মধ্যে পদ্মায় ভেঙে গেছে। এখন শুধু গৌড়বোরদিয়া মৌজা অবশিষ্ট আছে। গত দুই-তিন বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকান্দিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “কয়েকদিন আগে পদ্মার পানির স্রোতে বিল্লাল মেম্বারের বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ধসে গেছে। এখনো ৫০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ পড়েনি। বিষয়টি ফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসওকে জানিয়েছি। ইউএনও মহোদয়ও জানেন।”
৫০ বছর আগে থেকে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার পরিবার।
গত ৭-৮ বছরে উপজেলার ধূলশুড়া ইউনিয়ন থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে তীর রক্ষা কাজে শতশত কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকানো যায়নি। তাই স্থায়ী বেড়িবাঁধের দীর্ঘদিনের দাবি স্থানীয়দের।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা কাঞ্চনপুরের কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, “হরিরামপুরের চরাঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হয়েছে। কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকায়ও দ্রুত সময়ের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”