বান্দরবান শহরে প্রেস ক্লাবের সামনে জেলা পরিষদের আয়োজনে করা ‘সম্প্রীতির মিছিল’ শেষে এক সমাবেশে এ দাবি করেন খ্রিষ্ট্র ধর্মীয় এ যাজক।
Published : 02 Jan 2025, 09:46 PM
পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের সহিংসতা ও তারপর থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে বসতবাড়ি ছেড়ে তিন হাজার বম ভারতের মিজোরামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করেছেন খ্রিষ্ট্র ধর্মীয় এক যাজক।
বম সম্প্রদায়ের সদস্য রেভারেন্ড পাকসিম বম দাবি করেছেন, এ কারণে নয়টি বমপাড়া এখন জনশূন্য।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় বান্দরবান শহরে প্রেস ক্লাবের সামনে জেলা পরিষদের আয়োজনে করা ‘সম্প্রীতির মিছিল’ শেষে এক সমাবেশে তিনি এই দাবি করেন।
কেএনএফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের কারণে ভয় ও আতঙ্কে বম জনগোষ্ঠীর লোকজন এলাকা ছাড়তে শুরু করে ২০২২ সালে শেষ দিকে। সে সময় ৫০০ জনের মত বম সদস্য প্রতিবেশী ভারতের মিজোরামে গিয়ে আশ্রয় নেয় বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। পরে তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন।
এরপর গত বছরের এপ্রিলের শুরুতে রুমা ও থানচিতে ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রুমার সোনালি ব্যাংকে ডাকাতি হয় ২ এপ্রিল রাতে। পরদিন ভরদুপুরে থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতরা হানা দেয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দুটি ঘটনায় জড়িত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা, যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
ওই ঘটনার পর বান্দরবানের দুই উপজেলার চিরচেনা দৃশ্যপট হঠাৎ বদলে যায়। দুই উপজেলায় তিন ব্যাংক শাখায় ডাকাতির ঘটনার পর যৌথ বাহিনীর কেএনএফ-বিরোধী অভিযানে ‘গণহারে গ্রেপ্তারের’ মধ্যে চলাফেরা, খাদ্য সংগ্রহসহ নানা বিধিনিষেধের মধ্যে পড়তে হয় বলে বমরা অভিযোগ করছিলেন। এ সময়ও বমদের পাড়াছাড়ার ঘটনা ঘটছিল।
বৃহস্পতিবারের সম্প্রীতির মিছিলে রেভারেন্ট পাকসিম বম তার সম্প্রদায়ের তিন হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুতির দাবি করে বলেন, “রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইক্ষ্যং পাড়া, আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের ওলন্দাজন পাড়া, রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের জুরপি পাড়া, রেমাক্রী ইউনিয়নে চইক্ষ্যং পাড়া, লোয়াং মোয়াল পাড়া, থিন্দলতে পাড়া, স্লোপি পাড়া, পাইংক্ষ্যং পাড়া ও বান্দরবান সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া এখন বমশূন্য হয়ে আছে।”
জেলা পরিষদের আয়োজনে জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরে রাজার মাঠ থেকে এই ‘সম্প্রীতি মিছিল’ বের করা হয়।
বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ করা হয় মিছিলটি। পরে সেখানে ‘সম্প্রীতির সমাবেশের’ আয়োজন করা হয়। এতে কয়েকটি উপজেলা থেকে আসা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নেন।
পাকসিম বম বলেন, “কেএনএফ ইস্যুতে অন্তত তিন হাজার বম সম্প্রদায়ের লোকজন নিজ বসতবাড়ি ফেলে ভারতের মিজোরামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে পালাতে গিয়ে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে বন্দি রয়েছে অনেকেই। এসব ঘটনায় জেলার আটটি পাড়া ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি একটি পাড়াসহ মোট নয়টি বম সম্প্রদায়ের পাড়া জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
“এ ছাড়া এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে যেমন বম সম্প্রদায়ের উৎপাদিত ফসল ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যাঘাত হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি পরোক্ষভাবে জেলাজুড়ে পর্যটনখাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
ফলে কেএনএফ সংগঠনের নামে বিপদগামী সব বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের সরকারের নিকট আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুষ্ঠু জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান ধর্ম যাজক।
তিনি এই উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করেন।
সমাবেশে ম্রো স্টুডেন্ট সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি তনয়া ম্রো, মানবাধিকার কর্মী জন ত্রিপুরা, বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনেরর সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, বম সোস্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য লালজার লম বম, হেডম্যান উনিহ্লা মারমা, শিক্ষক ক্যশৈ প্রু খোকা, কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব আলাউদ্দিন ইমামী ও বৌদ্ধ ভিক্ষু সত্যজিৎ মহাথেরো বক্তব্য দেন।
পরে সন্ধ্যায় রাজার মাঠে চট্টগ্রাম থেকে আসা অতিথি শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণের ‘সম্প্রীতি কনসার্ট’ অনুষ্ঠিত হয়।