“এটি কোন দেশের এটি বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্রেনেডের গায়ে আমরা কোনো মেনুফ্যাকচারিং মার্ক বা এরকম কিছু পাইনি।”
Published : 09 Jul 2024, 12:34 AM
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলায় যে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল, তার সঙ্গে গাজীপুরের কালশীতে মাটির নীচে পাওয়া গ্রেনেডের মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানার দক্ষিণ ছায়াবিথী আবাসিক এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমির মাটির নীচে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৬টি আরজেএস গ্রেনেড পাওয়া যায়।
বিকালে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রেনেডগুলো নিস্ক্রিয় করার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন যে, আরজেএস গ্রেনেড, এটা আমাদের দেশে একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার সময় এই গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল। সে সময়কার গ্রেনেড, আর এই গ্রেনেড একই ধরনের।”
“তবু উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডগুলোর আসলে পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার আছে। এগুলো আমরা নিয়ে যাব, এটা আমরা ফরেনসিক চেক করব, এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাবো। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাতে পারবেন, এটি কবেকার গ্রেনেড।”
সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পেলাম, একটি মটকার (মাটির কলসি) ভেতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আরজেএস গ্রেনেড বলা হয়, এধরনের গ্রেনেড রয়েছে।
পুরানো খবর
গাজীপুরে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল কলস ভর্তি 'গ্রেনেড'
“একারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমরা আরওভি রোবটের (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রেনেড দেখার চেষ্টা করি। পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা। কারণ পিন খুলে গেলে গ্রেনেড খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি গ্রেনেড লাইভ অবস্থায় ছিল। গ্রেনেডগুলো একটি মটকার ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। একটা আরেকটার সাথে লেগেছিল, এগুলো সেপারেট করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবু আমরা সফলতার সাথে সবগুলো গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হয়েছি।
“পরে আমাদের টিমের দু’জন সদস্য বোম্ব স্যুট পড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হন।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা ১৬টি গ্রেনেড ডিসপোজ করেছি। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি পারসোনাল প্রেগমেন্টেশন টাইপ হয়ে থাকে। ”
গ্রেনেডগুলো কোন দেশের, কতদিন আগের জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি কোন দেশের এটি বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্রেনেডের গায়ে আমরা কোনো মেনুফ্যাকচারিং মার্ক বা এরকম কিছু পাইনি।”
কতদিন আগে এখানে মাটির নিচে এগুলো রেখে দেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দেখে যেটা বুঝেছি, এগুলো অনেক আগের কিন্তু স্পেসিফিক কতদিন আগে এটি আসলে বলা সম্ভব নয়। এটা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে।”
কারা এখানে গ্রেনেডগুলো রাখতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি আসলে তদন্তের বিষয়। গাজীপুর মহানগর পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থা এটি তদন্ত করবে। তদন্তের আগে এটা আসলে বলা সম্ভব নয়, এটা কত আগের অথবা কোন গোষ্ঠী এই গ্রেনেডগুলো এখানে রেখেছে।”
গ্রেনেড কতদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলো বিস্ফোরণ অথবা ডিসপোজ করার আগ পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। যে কোনো সময় এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।”
পুলিশ জানায়, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও সৌদি আরব প্রবাসী আবুল কাশেম তিন-চার বছর আগে দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছেন। সম্প্রতি ওই জমিতে তিনি বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নেন। সোমবার সকালে শ্রমিকরা সেই জমিতে মাটি খনন শুরু করেন।
পরে সকাল ৯টার দিকে মাটির নীচ থেকে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। কোদালের আঘাত কলসটি ভেঙে গেলে ভেতরে গ্রেনেড দেখা যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা এসে পরীক্ষা করে নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
জমির মালিক আবুল কাশেম বলেন, “শ্রমিকরা সকাল ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানান। প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করি। পরে সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।”
খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বেলা ১২টার দিকে ঢাকা থেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা দুটি অত্যাধুনিক রোবট, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কলস থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধারের পরে বিকাল ৪টার দিকে সেগুলো নিষ্ক্রিয়করণ শুরু হয়। এ সময় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ স্থানে গ্রেনেডগুলোর পর পর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আশেপাশের এলাকা। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এলাকা।
নিষ্ক্রিয়করণের সময় নিরাপত্তার জন্য ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট।
গ্রেনেড নিষ্ক্রিয়করণ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফাহিম আশজাদ ও সদর মেট্রো থানার ওসি সৈয়দ রাফীউল করিমসহ অন্যরা।