“আমার বোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। আমরা ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে ভেতরে ভেতরে ভেঙে গিয়েছিল।”
Published : 10 Apr 2025, 11:05 AM
জাপানে স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছিলেন সুলতানা পারভিন। স্বামীর কাছে যাওয়ার সব প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু একটি আপত্তিকর ভিডিও স্বপ্নে বিভোর এ নববধূর জীবন তছনছ করে দিয়েছে। তিনি বেছে নিয়েছেন ‘আত্মহননের’ পথ।
রোববার দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে সুলতানা পারভীন ওরফে সোহা বাবার বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে সুলতানার এমন মৃত্যু তার পরিবারের সদস্যরা মেনে নিতে পারছেন না। মেয়ের নতুন জীবন শুরুর আনন্দের বদলে, সেখানে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে আপত্তিকর ওই ভিডিও ছাড়ানোর ঘটনায় সুলতানার পরিবারের সদস্যরা তার স্বামী অনিকের বোন জামাই পর্তুগাল প্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। সুলতানা মৃত্যুর আগে লিখে যান তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। সেখানেও নাহিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
সুলতানার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার মা ফিরোজা বেগম সন্তান হারিয়ে কেবল বিলাপ করে চলেছেন।
কী হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।” এ কথা বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন ফিরোজা বেগম।
সুলতানার সঙ্গে ১০ মাস আগে জাপান প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর হাসিমুখে সংসার শুরু করেছিলেন তিনি। অনিক স্ত্রীর ভিসার সব কার্যক্রম শেষ করেছিলেন, ঠিক তখনই নেমে আসে অমানিশার ছায়া।
সুলতানার পরিবারের অভিযোগ, নাহিন এই বিয়ে মেনে নেননি। তিনি অনিককে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ কারণে নাহিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে সুলতানার ছবি দিয়ে বিকৃত ডিপ ফেইক ভিডিও তৈরি করে একটি ফেইক আইডি থেকে তা ছড়িয়ে দেন। ওই ভিডিও প্রথমে সুলতানাকে এবং পরে তার স্বামী অনিককেও পাঠানো হয়।
সুলতানার ভাই নৌ-বাহিনীর কোস্ট গার্ডে কর্মরত আলিমুল ইসলাম বলেন, “এই ভিডিওর কারণে আমার বোনের সংসারে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়। তার ওপর মানসিক নির্যাতনও চলে। পরবর্তীতে জানা যায়, ভিডিওটি ভুয়া এবং এর পেছনে ছিলেন অনিকের বোন জামাই নাহিন শেখ।
“কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আত্মহত্যার আগে সুলতানা তিন পাতার সুইসাইড নোট রেখে গেছে, যেখানে সে নাহিন শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছে।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার বোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। আমরা ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে ভেতরে ভেতরে ভেঙে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে আমাদের সবার অগোচরে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুলতানার স্বামী আশরাফুল ইসলাম অনিক ভিডিও কলে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি সুলতানাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সব কাগজপত্র ঠিক করে ওকে জাপানে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বোন জামাই মেনে নেয়নি। সে পরিকল্পনা করেই এসব করেছে। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব, এ ঘটনার বিচার চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে পর্তুগাল প্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আদিতমারী থানার ওসি আলী আকবর বলেন, “এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (ইউডি) মামলা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করেছি।”