ভোলায় জ্যাকবের আসনে পিআরএলে থাকা সচিবের চোখ

মেজবাহ উদ্দিনের দাবি, অবসর প্রস্তুতির ছুটিতে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি করণীয় জানতে চান। তখন সরকারপ্রধান তাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে বলেন।

ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2023, 11:27 AM
Updated : 26 April 2023, 11:27 AM

অবসর প্রস্তুতির ছুটিতে থাকা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোলা-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

নিজেকে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান দাবি করে তিনি বলেছেন, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আর ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই’ তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।

বুধবার ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মেজবাহ এ কথা বলেন।

এ আসনে গত তিন মেয়াদ ধরে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তিনি আগামী নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে মেজবাহর সমর্থকরা প্রচার করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি ভোলা-৪ আসন থেকেই ভোটে অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখলে সদ্য সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা মেজবাহ বলেন, “হ্যাঁ, আমি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইব।”

তার দাবি, অবসর প্রস্তুতির ছুটিতে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি করণীয় জানতে চান। তখন সরকারপ্রধান তাকে `রাজনীতিতে সক্রিয় হতে’ বলেন।

৫৯ বছর বয়স হওয়ায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন এ বছরের ১ জানুয়ারিতে অবসরে যান।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমলারা অবসরে রাজনীতিতে যুক্ত হতে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিতে আর বাধা নেই। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়ত নির্বাচনী আইনে বাধা রয়েছে।"

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১২ অনচ্ছেদে বলা হয়েছে- সরকারি চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পার না হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবে না।

অবসরে যাওয়ার পর নির্বাচনে অংশ নিতে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষার এই শর্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেজবাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। সরকারপ্রধান তাকে বলেন, ‘সেটা তখন দেখা যাবে'।

তিনি বলেন, “ফখরুদ্দিন সরকারের সময় (সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়) করা এই কালো আইন বাতিলের জন্য একজন আবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ারকে দিয়ে হাই কোর্টে মামলা করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এটার নিষ্পত্তি হবে।”

মেজবাহ বলেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ অনেকেই তার সঙ্গে আছেন। তারাও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান।

জনসংযোগে হামলার অভিযোগ, জ্যাকবের দিকে আঙ্গুল

নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এবার ঈদের ছুটিতে এসে মেজবাহ বেশ কয়েকদিন জনসংযোগ করেন।

পৈত্রিক বাড়ি চরফ্যাশনে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ৫০টি বাজারে এবার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও গণসংযোগ করার কথাও বলেছেন তিনি।

তার অভিযোগ, গত সোমবার বিকেলে চরফ্যাশন উপজেলার চেয়ারম্যান বাজারে গণসংযোগকালে তার বহরে হামলা হয়। এসময় ২ জন সাংবাদিকসহ আহত হন ১৫ জন।

ওই হামলার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য জ্যাকবকে দায়ী করেন মেজবাহ। বলেন, “স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশ ছাড়া সেখানকার একটি গাছের পাতাও নড়ে না।”

জ্যাকব চরফ্যাশনকে ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ বানিয়েছেন অভিযোগ করে সাবেক সচিব বলেন, “স্থানীয় সংসদ সদস্য ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি বাহিনী তৈরি করেছেন। এরা এলাকায় সন্ত্রাস, বাড়ি দখল, বাজারের ভিটা দখলসহ নানা অপকর্ম করে চরফ্যাশনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।”

‘বিষয়টি’ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেছেন জানিয়ে মেজবাহ বলেন, তিনি চরফ্যশনকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত, ইয়াবামুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত’ করতে চান। এজন্য সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।

ভোলার বহু মানুষকে চাকরি দিয়েছেন দাবি করে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে এক হাজার ১৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন করার কৃতিত্বও দাবি করেন তিনি। বলেন, “এখন পিআরএল সারেন্ডার করলেই আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিসহ সব কাজ করতে পারব।”

মন্তব্য নেই জ্যাকবের

মেজবাহের এসব অভিযোগ ও দাবির বিষয়ে সংসদ সদস্য জ্যাকবের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

এই সংসদ সদস্য বলেন, “আমি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি। উনি (মজবাহ) ছিলেন আমার অধীনস্ত একজন কর্মকর্তা। আমার কাছে তার জবাবহিদি করতে হত। আমি তার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”