এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষতির কথা বলছেন খামারিরা।
Published : 19 Dec 2022, 06:49 PM
ফেনীর সোনাগাজীতে এক সপ্তাহে অন্তত দুইশ ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে, যেগুলোকে ‘পাগলা কুকুর কামড়েছে’ বলে খামার মালিক ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও পশুচিকিৎসক সুপন নন্দী জানান,গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রোববার রাত পর্যন্ত উপজেলার দক্ষিণ চরচান্দিয়া ও চর আবদুল্লাহ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কৃষকরা জানান, গত চারদিনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ১৭৫টি, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আদর্শগ্রাম এলাকার সাহাব উদ্দিন খানের ১৭টি ও দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকা ফকির আহম্মদের তিনটি ভেড়া মারা যায়।
এ ছাড়া আগের তিন দিনে একই কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও ২১টি ভেড়া মারা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান ।
এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন খামারিরা।
নজরুল ইসলাম জানান, তার নিজ খামারে ২৭৫টি ভেড়া ছিল। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে ‘কয়েকটি পাগলা কুকুর’ খামারের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে দুই শতাধিক ভেড়াকে কামড়ে আহত করে। এতে তার ১৭৫টি ভেড়া মারা যায়। এর মধ্যে ১৫০টি ভেড়া অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও অর্ধশত ভেড়াকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তার দাবি, ১৭৫টি ভেড়া মারা যাওয়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অপর ভেড়াগুলো সুস্থ না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে শঙ্কা করছেন তিনি।
নজরুল ইসলামের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ হলেও তার খামার সোনাগাজীতে এবং খামারের পশুগুলো মূলত সোনাগাজীর চরাঞ্চলে লালিত-পালিত হতো।
সোনাগাজী আদর্শগ্রাম এলাকার খামারি সাহাব উদ্দিন খান বলেন, তার খামারে অর্ধশতাধিক ভেড়া ছিল। শনিবার রাতে ‘কয়েকটি পাগলা কুকুর’ খামারে ঢুকে ২০ থেকে ২৫টি ভেড়াকে কামড়ে আহত করে। রোববার সকালে ১৭টি ভেড়া মারা যায়।
তার অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানোর পরও তারা সঠিক সময়ে খামারে আসেননি।
“দ্রুত এলে কিছু ভেড়াকে বাঁচানো সম্ভব হতে পারত।”
কুকুরের কামড়ে ভেড়ার গণহারে মৃত্যুর তথ্য পেয়ে ঘটনার তিন দিন পর শনিবার বিকালে কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও পশুচিকিৎসক সুপন নন্দী।
তিনি বলেন, গত চার দিনে চর আবদুল্লাহসহ আশপাশের এলাকায় ১৯৫টি ভেড়া ‘পাগলা কুকুরের কামড়ের বিষক্রিয়ায়’ মারা গেছে। এ ছাড়া এক সপ্তাহে কুকুরের কামড়ে আহত অন্তত অর্ধশত ভেড়া, ছাগল, গরু ও মহিষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও টিকা দিয়েছেন। আহত ভেড়াগুলোকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়াতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত তিন দিনে ওইসব এলাকার বাড়ি-ঘরে পালিত ২১ ভেড়ার মৃত্যুর তথ্য পাননি বলে জানান এ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
কুকুরের কামড়ে ভেড়া মারা যাওয়ায় খামারিরা ‘আতঙ্কিত’ উল্লেখ করে সুপন নন্দী বলেন, চরাঞ্চলের কুকুরগুলোকে টিকার আওতায় আনা যায় কি না, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, খামারিদের বিপদে-আপদে পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দায়িত্ব। কিন্তু চরাঞ্চলে শতাধিক ভেড়া মারা যাওয়ার ঘটনায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে।
ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনা ঘটার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ঘটনাস্থলে না পৌঁছানো দুঃখজনক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।