পানের বরজগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার কারণে অপরিপক্ব পান কেটে ফেলছেন চাষিরা।
Published : 29 Aug 2024, 04:59 PM
টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিন ও রাতে বরজ থেকে পানি নিষ্কাশন করেও কিনারা করতে পারছেন না কৃষকরা।
এতে তারদর কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। শঙ্কা তৈরি হয়েছে পান চাষে জড়িত শত শত মালিক ও শ্রমিক সবাই বেকার হয়ে পড়ার।
কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। পান চাষে জড়িত আছেন ১ হাজার ৭২জন কৃষক। এর মধ্যে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরি হচ্ছে।
বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পানের বরজের জলাবদ্ধতা চোখে পড়ে। সেচ প্রকল্প হওয়ার কারণে খুব দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে পানি আবার বেড়ে যায়।
উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের পান চাষি আবু তাহের জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছেন। এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দুটি বরজ। শ্রমিক নিয়ে পানি নিষ্কাশন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
তার পানের বরজের ভবিষ্যৎ কি হবে তাও বলতে পারছে না তিনি।
একই গ্রামের হেনা আক্তার বলেন, ছয় মাস আগে আড়াই লাখ টাকা ঋণ করে ১০ শতাংশের মধ্যে পানের বরজ করেছেন। পুরো পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কী করবেন তাও জানেন না।
পান চাষি সফিকুর রহমান বলেন, “পান ও সুপারির আবাদ আমাদের উপজেলার ঐতিহ্য। আমার এক জমিতে পানের বরজ ছিল। তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে, সব তলিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৭০০ কৃষকের এমন পরিস্থিতি হয়েছে।”
কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করা উত্তর আলগী ইউনিয়নের পান চাষি শাহজাহান ও শহীদুল্লাহ ঠাহরদার বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের বরজ শেষ। পান গাছের গোড়া পচে গেছে। পানি গেলেও আর গাছ বাঁচবে না।
“কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো বলতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।”
এদিকে পানের বরজগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার কারণে অপরিপক্ব পান কেটে ফেলছেন চাষিরা। এসব পান বিক্রির জন্য সাজানো হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও দোকানের সামনে।
আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের পান বেপারী কাদের গাজী বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে পান বড় হলে বিক্রি করেন চাষীরা। কিন্তু দুর্যোগ মুহূর্তে এখন কিছুই করার নেই। বরজ থেকে কর্তন করে কোনো রকম বিক্রির জন্য বিড়া সাজানো হচ্ছে। আর না হয় জমিতে পচবে এসব পান।
তিনি বলেন, “পান বড় হলে প্রতি বিড়া বিক্রি হতো ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সাইজে ছোট হওয়ায় এখন প্রতি বিড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।”
হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন, কৃষকদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সঠিক না। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। সরকারি প্রণোদনা আসলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।