শরীয়তপুরের ভাটায় ইটের আকার ‘হ্রাস’, ঠকছেন ক্রেতা

দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা – প্রতিক্ষেত্রে সরকারি পরিমাপের চেয়ে কম করে ইট তৈরির তথ্য মিলেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে। 

কে এম রায়হান কবীরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2022, 12:54 PM
Updated : 26 Dec 2022, 12:54 PM

শরীয়তপুরে ইটের আকার ছোট করে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে। 

দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় সরকারি পরিমাপের চেয়ে কম করে ইট তৈরির তথ্য মিলেছে সরেজমিন অনুসন্ধানে।  

জেলার ৫৯টি ইটভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে সাতটির। বাকি ৫২টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকায় জেলা প্রশাসন সেগুলোর সনদ দেয়নি।   

এদিকে, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার নামে এ বছর প্রতি হাজার ইটের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। 

নানা অভিযোগ শোনার পর শরীয়তপুর সদর, জাজিরা, গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে ইটের পরিমাপ সরকার নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে কম পাওয়া যায়। 

জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় ৫৯টি ইটের ভাটা রয়েছে। তার মধ্যে সদরে ২১টি, জাজিরা উপজেলায় ১২টি, নড়িয়ায় ৯টি, ভেদরগঞ্জে ৬টি, ডামুড্যায় ৩টি এবং গোসাইরহাট উপজেলায় ৮টি ভাটা রয়েছে। 

এ সব ভাটায় প্রস্তুত ইটের আকার পাওয়া গেছে দৈর্ঘ্য ২২ সেন্টিমিটার, প্রস্ত ৯ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৫ সেন্টিমিটার। 

সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি ইটের আবার হতে হবে দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৭ সেন্টিমিটার। 

সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সই, ভ্যাট, আইটি সনদ দিয়ে ভাটাগুলোতে ইট তৈরি হচ্ছে এবং নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশের অবস্থান আবাদি ও ফসলি জমিতে এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এখানে ব্যবহৃত কোটি কোটি ঘনফুট মাটির বেশিরভাগই কৃষি জমি থেকে সংগৃহীত হচ্ছে; এবং তা ফসলি জমির উপরাংশের মাটি। 

ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অপরদিকে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। মাটি নেওয়া জমিগুলোতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। 

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন টিনের চিমনি বন্ধ করতে পারলেও, আকার ও আবাদি জমির ওপরের অংশের মাটির ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না। 

ডামুড্যার নাদিম মিয়া, গোসাইরহাটের জলিল শেখ, সদর উপজেলার আলী আজগরসহ একাধিক ইটের ক্রেতা বলেন, তারা  ইটের সঠিক মাপ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

প্রতি হাজার ইটের দাম প্রায় ১৩/১৪ হাজার টাকা হওয়ায় ক্রয় খরচও বেড়ে গেছে; আগে দাম ১০/১১ হাজার টাকা ছিল বলে তাদের ভাষ্য।   

‘কে কে ব্রিকস’ ও ‘হাটুরিয়া ব্রিকস ফিল্ড’সহ একাধিক ভাটার মালিক বলেন, সরকারের নীতিমালা মেনে ভাটা স্থাপনে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু অনুমোদন পাচ্ছেন না বছরের পর বছর। চলতি বছর কয়লা, মাটিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে ইটের দাম প্রতি হাজারে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। 

এ ব্যাপারে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল জলিল খান বলেন, “আগে ইট বানানোর ফর্মা যে সাইজের ছিল এখন তার চাইতে একটু বড় ফর্মা দিয়ে ইট বানানো হচ্ছে, যাতে ইট পোড়ানোর পর ছোট হয়ে না যায়। এবার ইট সরকারি সাইজ মতোই বানানো হচ্ছে।” 

শরীয়তপুরের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অভিজিৎ সূত্রধর বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর টেকনিক্যাল পার্সন সঙ্গে নিয়ে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। 

“আমরা অভিযান পরিচালনা করি এবং তারা সুপারিশ করলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি।” 

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে মাটি কাটার অনুমতিপত্র ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া জেলা প্রশাসন ইটভাটার লাইসেন্স দেয় না বলে তিনি জানান। 

ইটের আকারের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি, অচিরেই অভিযান পরিচালনা করব।” 

পরিবেশ আইন লঙ্ঘনে কোনো নিয়মিত মামলা হয় কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকারের লোকজন বিষয়টি তদারকি করে; নিয়মিত মামলার বিষয়টি তারা দেখে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সময় অস্থায়ীভাবে বন্ধ রেখে পরিবেশ অধিদপ্তরকে আমরা সুপারিশ করি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।” 

তবে জেলা প্রশাসন সকল ভাটায় ইতোমধ্যে পরিবেশ বান্ধব ‘জিগজাগ’ চুল্লি স্থাপন করতে পেরেছে বলে তিনি জানান। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজীকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।