জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
Published : 07 Oct 2023, 06:25 PM
টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সিলেট নগরীর রাস্তাঘাট-পাড়া-মহল্লা-বাসাবাড়িতে। পানি ঢুকে পড়েছে সরকারি-বেসকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
শনিবার সকালে সরেজমিনে নগরীর বাগবাড়ি, এমএজি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল এলাকা, কাজল শাহ, উপশহর, সাদাটিকর, দরগামহল্লা, কালিঘাট, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়, বাদামবাগিছা, পীরমহল্লা, কেওয়াপাড়া, পায়রা, কুয়ারপাড়, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড়, দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর ও সিলেট রেলওয়ে স্টেশন এলাকার রাস্তাঘাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাসাবাড়িতে পানি দেখা গেছে। এসব এলাকার কোথাও-কোথাও হাঁটু সমান পানিও চোখে পড়েছে।
কথা হয় নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাদামবাগিছা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকা সাহেদা বেগমের সঙ্গে।
তার ভাষ্য, “একটু ভারি বৃষ্টি হলে বাসার ভেতর পানি ঢুকে। এ জন্য কিছু দিন পর পর বাসার জিনিসপত্র উপরে তুলতে হয়। বৃষ্টিতে আজ ভোরে বাসার ভেতরে পানি ঢুকে। প্রায় হাঁটু সমান পানি; তখন সবাই ঘুম থেকে জেগে জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। যদিও খাটগুলো ছিল পানির নিচে।
“এভাবে পানি ওঠার কারণে আমাদের রান্নাও বন্ধ থাকে। আর বাসার অনেক জিনিস নষ্ট হয়। এই এলাকার অনেকের বাসায় পানি উঠেছে।”
এই ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম।
সেখানে দেখা যায়, খোদ ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থই থই করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে।
কাউন্সিলর ফরহাদ শামীম বলেন, “সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদের ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।”
শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের পাড়ার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। টানা বৃষ্টি হলেই বাসায় পানি ঢোকে। নগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সিটি করপোরেশন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে নগরবাসীকে বার বার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে।”
ওই এলাকার সাদাটিকরের বাসিন্দা রজত কান্তি দাস বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বাসার সামনে পানি। বাসার নিচতলার গ্যারেজেও পানি ঢুকে যায়। এতে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যেতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই নোংরা পানি মাড়িয়ে অফিসে যাই।”
দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা মিলন আহমদ জানান, বৃষ্টির কারণে গভীর রাতে তার বাসায় পানি প্রবেশ করে। পরিবারের সদস্যরা না ঘুমিয়ে রাত কাটায়। তাদের এলাকার অনেক বাসাবাড়ির অবস্থা একই রকম। অনেকে ঘরের আসবাবপত্র খাটের উপর তুলে রেখেছেন।
যতরপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীল চৌধুরী বলেন, “রাত ৪টার একটু আগে বাসার ভেতরে পানি ঢুকে। আমাদের ঘরের মেঝেতে থাকা জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানির কারণে আমাদের কিছু দিন পর পর এ সমস্যায় পড়তে হয়। কবে যে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব জানি না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বাসা বিক্রি করে অন্য এলাকায় চলে যেতে হবে।”
এদিকে, সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩৫৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারি বৃষ্টির কারণে নগরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে; বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। এছাড়াও নগরের কিছু-কিছু এলাকার ড্রেন ও নালাতে পলিথিন, বালু-ময়লার কারণে জ্যাম লেগেছে। তবে ড্রেন-নালা পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।
সেইসঙ্গে সুরমা নদী খনন করানো জরুরি বলে মনে করছেন এ প্রকৌশলী।