বান্দরবানের পাহাড় থেকে গুলিবিদ্ধ ৩ লাশ উদ্ধার

নিহতদের একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছে।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2023, 01:10 PM
Updated : 8 May 2023, 01:10 PM

বান্দরবানের রোয়াংছড়ির গহিন পাহাড় থেকে তিনটি গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পাইক্ষ্যং পাড়ায় অজ্ঞাত পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির পর বম সম্প্রদায়ের তিনজনের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

“বিকাল ৫টার রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়।”  

 নিহতরা হলেন রোয়াংছড়ির  রনিন পাড়ার লিয়ান থন বমের ছেলে লাল লিয়ান বম (৩২),  নন দাও বমের ছেলে সিমলিয়ান থাং বম (৩০) এবং দৌখার বমের ছেলে নেমথাং বম (৪৩)।

এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে; এ ঘটনায় কারা জড়িত এবং কেন এমন ঘটনা ঘটল তা উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে, বলেন এসপি তারিকুল।

নেমথাং বম স্থানীয় সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।

রোয়াংছড়ি থানার ওসি আব্দুল মান্নান জানান, দুপরে উপজেলা সদর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে পাইক্ষ্যং পাড়া এলাকায় লাশগুলো পাওয়া যায়।

তিনি জানান, সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাইক্ষ্যং পাড়ার রিজার্ভ এলাকায় তিনটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। বিকালে পুলিশের একটি দল পুলিশ গুলিবিদ্ধ এই তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। 

এর আগে গত ৭ এপ্রিল রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের খামতাং পাড়ায় দুটি সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর মধ্যে গোলাগুলিতে আটনজন নিহত হয়।

ওই সময় পুলিশ বলেছিল, নিহত আটজনই বম সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে ছয়জন রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের জুরভারাং পাড়ার বাসিন্দা; বাকি দিইজন রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের পাইক্ষ্যংপাড়া ও রনিন পাড়ার বাসিন্দা।

ওই গোলাগুলির পর আতঙ্কের মধ্যে পাড়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পাড়া ছাড়ে খামতাং (তিনটি পাড়ার লোকজন খামতাং পাড়ার নামে বসবাস করে) পাড়ার মোট ৯৭ পরিবার খিয়াং জনগোষ্ঠীর। তার মধ্যে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদালয়ে আশ্রয় নেয় ৫৩ পরিবার।

রুমা উপজেলার দিকে চলে যায় ৪৪ পরিবার। তার মধ্যে বম কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নেয় ২২ পরিবার। বাকি ২০ পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজনের ঘরে ওঠে।

তার কয়েক দিন পর আতঙ্কে রোয়াংছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আত্মীয়-স্বজনের ঘরে আশ্রয় নেয় পাইক্ষ্যং পাড়ার আরও ৩০০ পাড়াবাসী। পাইক্ষ্যং পাড়াবাসী কিছু দিন পর ফিরে গেলেও খামতাং পাড়াবাসী ফিরে যায় ১৭ দিন পর।

রোয়াংছড়ি উপজেলায় আট হত্যাকন্ডের এক মাস পার না হতেই আবারও ঘটল তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় কেএনএফ [স্থানীয়ভাবে বম পার্টি নামে পরিচিত] এবং নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার হিল ফিন্দাল শারক্বীয়া’র বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব। কখনও কখনও তাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।

মার্চের শুরুর দিকে অভিযানের মধ্যে ‘আতঙ্কে’ রুমা ও আশপাশের এলাকা থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। অন্তত ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সে সময় বন্ধ হয়ে যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকায় রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।