“তিনদিন ধরে গোসল খাওয়া নেই। কিন্তু কোনো উপায়ও নেই। বাধ্য হয়ে গাড়িতেই অবস্থান করছি।”
Published : 11 Nov 2024, 11:23 AM
বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।
গাজীপুর নগরীর মালিকের বাড়ি এলাকার ‘টিএনজেড গ্রুপের’ ছয়টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে ব্যস্ততম এ সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।
অবরোধের কারণে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে; সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই মহাসড়কে চলাচলকারীরা। দীর্ঘসময় গাড়ি আটকে থাকায় হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে।
সোমবার সকালে মোগরখাল এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাত দিনের সময় চেয়েছিল। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় অনেক তারিখ দিয়েও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই তারা কোনো কথাতেই আর আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহারকারী বিভিন্ন অফিসগামী যাত্রী এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও গত তিনদিন ধরে তাদের কর্মস্থল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না বলে জানা গেছে।
পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলেও বাধা দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাতে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশকে ওই এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, “রোববার সন্ধ্যায়ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। বেতন না পেয়ে শ্রমিকরাও মহাসড়ক ছাড়তে নারাজ।
“শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি বিজিএমইএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।”
এদিকে শ্রমিকরা রোববার রাতও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কাটিয়েছেন। তারা পালাক্রমে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের পূর্ব পাশে একটি অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে শ্রমিকদের অবস্থান করার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
তবে তিনদিন ধরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলেও কোনো শ্রমিক যানবাহন ভাঙচুর বা ক্ষতিসাধন করেননি। তাদের দাবি, ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে ঘরে ফিরবেন তারা।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান জানান, শ্রমিক অবরোধের কারণে তৃতীয় দিনের মতো গাজীপুর থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার গণপরিবহনের যাত্রী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। সাধারণ মানুষ গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তায় নেমে হেঁটে অথবা বিকল্প পথ দিয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করছে।
আর ঢাকা থেকে যারা উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন, তারা বিকল্প পথ দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা ও চন্দ্রা হয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন। ভোগরা বাইপাস দিয়ে এবং জয়দেবপুর থেকে বনমালা হয়ে টঙ্গী দিয়েও কিছু যানবাহন চলাচল করছে বলে জানান তিনি।
ইব্রাহিম খান বলেন, “শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী মিলে কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বারবার বলেছি, রাস্তাটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারাও বেতন পাচ্ছে না, এটার দাবিতে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি।”
ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ইউনাইটেড পরিবহন বাসের চালক আবু তাহের বলেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে তিনি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের উত্তর পাশে এসে আটকা পড়েছেন। ওইদিন যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে চলে গেলেও তিনি এবং তার দুই সহকারী আটকা পড়ে আছেন তিনদিন ধরে।
তিনি বলেন, “তিনদিন ধরে গোসল খাওয়া নেই। কিন্তু কোনো উপায়ও নেই। বাধ্য হয়ে গাড়িতেই অবস্থান করছি।”
কারখানার শ্রমিক শরিফা বেগম জানান, “তিনদিন ধরে দিনে-রাতে মহাসড়কের উপর কেউ চাটাই বিছিয়ে, কেউ খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে আছেন। সেখানেই খাওয়া দাওয়া সারছেন।
তিনি বলেন, “চাঁদা তুলে চাল-ডাল সবজি কিনে খিচুড়ি রান্না করে খাচ্ছি। মুড়ি-চানাচুর, চিড়া দিয়ে নাস্তা করছি। যত কষ্টই হোক, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়কেই অবস্থান করব।”
শ্রমিক বিক্ষোভে অচল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ২০ কিলোমিটার যানজট
গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ, যানজট