তিস্তার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির মধ্যে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
Published : 30 Sep 2024, 10:04 PM
তিন দিন পর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি থেকে পানি নামার পাশাপাশি কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এ ছাড়া খাদ্য সংকটে ভুগছেন বানভাসিরা।
সোমবার সন্ধ্যায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান।
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বেড়ে গেলে ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে যায়।
তিন দিন পর নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বানের পানি নেমে গেছে বসতবাড়ি থেকে। তবে দুর্ভোগ কাটিয়ে স্বাভাবিকতায় ফিরলেও অনেক পরিবারের মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলে বানভাসিদের অভিযোগ।
উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামের রফিকউল ইসলামের অভিযোগ, “তিন দিন ধরে পানিবন্দি ছিলাম। শুধু শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছি। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
“আজ বাড়িঘর থেকে পানি নেমেছে, আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য রোববার আমাদের নামের তালিকা নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতা পাইনি।”
অপরদিকে পানি কমায় নদী তীরবর্তী পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের দুটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরশ্বর ও পূর্বছাতনাই গ্রামের এক হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমার সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বানভাসিদের খাদ্য সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৫৫০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল এবং ৩০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
খালিশা চাপনী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাইশপুকুর গ্রামের মো. রবিউল ইসলাম বলেন, দুই দিনে প্রায় ১৫ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০০ পরিবারের তালিকা করে জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার ত্রাণের চাল বিতরণ করা হবে।
ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা কেল্লাপাড়ার কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, “বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। ক্ষেতের আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে ছিল তিন দিন।
“রোববার থেকে নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব জমি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে তুলনামূলকভাবে ক্ষতি কম হয়েছে।”
ওই এলাকার গৃহিনী মহসেনা বেগম বলেন, “বানের পানিতে সব তলায় গেছিল। গরু ছাগল নিয়ে অনেক কষ্ট হইছে। তিন দিন থাকি গরু-ছাগল গুলাক খাইবার দিবার পাও নাই। তয় আইজ থাকি গরু ছাগল গুলাক খাইবার দিবার পাইম।”
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য ৩০ টন চাল ও এক হাজার ৫৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে; যার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আতিকুর রহমান বলেন, সোমবার বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় তা কমে ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ব্যারাজের সবকটি জলকপাট (৪৪) খুলে রাখা হলেও নদীর পানি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে বলে জানান তিনি।
তবে এখন পর্যন্ত কোথাও নদী ভাঙনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, উজানে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার দোমহানী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং মেকলিগঞ্জ পয়েন্টে ৪১ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারীতে পানি বৃদ্ধি হওয়া কোনো পূর্বাভাস নেই।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০ টন চাল ও ১৫৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
এক হাজার ৫৮০ পরিবারের তালিকা তৈরি করে এসব চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর কয়েক দফা পানি কমে বেলা ১২টায় তিন সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেন্টিমিটার নিচে নামে।