নতুন উপাচার্যের অধীনে কমিটির মাধ্যমে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
Published : 15 Apr 2025, 06:07 PM
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের-কুয়েট উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা ছয়টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ‘কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে’ এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন ঘোষণাপত্র পাঠে বলেন, “কুয়েট ভিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে, এ কারণে আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা ঘোষণা করছি। এই ভিসিকে অপসারণ এখন আমাদের একমাত্র দাবি।”
একইসঙ্গে নতুন উপাচার্যের অধীনে গঠিত কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এর পরপরই আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওইদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিও করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন।
এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি মহানগর হাকিমের আমলি আদালতে মামলা করার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার জানাজানি হলে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এদিকে, গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
একইসঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
তবে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। হল খুলে দেওয়ার দাবিসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
এখনই প্রশাসনের কাছে বহিষ্কার হওয়া ৩৭ শিক্ষার্থীর সবার নাম প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও বহিরাগতদের নৃশংস হামলায় প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হন। তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবি তুললে বিচারের নামে ‘নাটক করে’ দুই মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ জন প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয় বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
তারা বলেন, এরপর সোমবার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদেরও বহিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এসব নাটক’ তারা আর সহ্য করবে না। তিন দিন ধরে তারা খোলা আকাশের নিচে মশার কামড় খেয়ে কষ্ট সহ্য করে আন্দোলন করছেন।
হলের তালা ভাঙার আগে ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে দুপুর ১টার দিকে সমাবেশ করে ‘মেক কুয়েট, ফ্রি এগেইন’ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে মঙ্গলবার।
তালা ভাঙার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, “আমি সিন্ডিকেটে বিষয়টা উপস্থাপন করব। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটই নেবে।”
আরো পড়ুন:
কুয়েট ঘিরে আবার উত্তেজনা, পুলিশ মোতায়েন