শাওনের শরীরে দুটি ক্ষত, গুলি মেলেনি: চিকিৎসক

বৃহস্পতিবার বিকালে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2022, 11:41 AM
Updated : 2 Sept 2022, 11:41 AM

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত ‘যুবদল কর্মী’ শাওন প্রধানের শরীরে দুটি ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে; তবে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে শাওনের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন মফিজ উদ্দিন। তারপরই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শেখ ফরহাদ এ তথ্য জানিয়ে শুক্রবার দুপুরে বলেন, “নিহতের বুকের বা পাশে এবং পিঠের নিচের অংশে দুটি ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। গভীর ক্ষত দুটি। তবে শরীরে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি।”

“বুকের বা পাশে একটি এবং পিঠের নিচের অংশে আরেকটি ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে।”

কী কারণে শাওনের মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, “এই বিষয়ে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পরে বিস্তারিত বলা যাবে।”

নিহত শাওন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে। নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে শাওনদের একতলা বাড়ি।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টায় নগরীর ডিআইটিতে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেয়। এতে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ। এই সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন শাওন।

আহত অবস্থায় শাওনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে দেওভোগের বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দেন। তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জানিয়ে ডান পায়ে গুলির আঘাত দেখান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ওর (শাওন) লগে আরও লোক আছিল। আমরাও ছিলাম। তয় ওরে আমরা চিনতাম না। ওয় অন্য গ্রুপের লগে আইছে। পুলিশ যখন গুলি করতেছিল তখন আমরা গুলশান হলের গেটের সামনে ছিলাম। দুই পাশ দিয়াই ইট-পাটকেল মারতাছিল অনেকে। ওই পোলায় একটা ইট হাতে নিয়া রাস্তায় নামার পরই একটা গুলি আইসা তার বুকে লাগে। নিচে পইড়া গেলে তারে তুইলা গুলশান হলের গেটের সামনে আইনা রাখি। পরে ওয় কয়, ‘ভাই আমারে হাসপাতালে নিয়া যান, আমার ভাল্লাগতাছে না’। হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার কইছে ওয় মারা গেছে।”

এদিকে শাওনের মৃত্যুর পর তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।

পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শাওন ‘রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন’। অপরদিকে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, সক্রিয় কর্মী শাওন বক্তাবলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ময়নাতদন্তের পর রাত সাড়ে ১২টায় কড়া পুলিশ প্রহরায় তাকে দাফন করা হয়। তারপরই নিহতের বড়ভাই মিলন হোসেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা একটি মামলাটি করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ‘পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইট ও গুলির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে’ তার ভাই মারা গেছেন।

যদিও শুক্রবার দুপুরে শাওনের বাড়ি গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সহানুভূতি প্রকাশের সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে যুবদলের কর্মী বলেই উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করেন, তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন মিথ্যাচার করছে।

আরও পড়ুন:

শাওনের মৃত্যু ‘বিএনপির গুলিতে’, অভিযোগ ভাইয়ের মামলায়

শাওনের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ হচ্ছে, অভিযোগ ফখরুলের

শাওনের দাফন হলো পুলিশের পাহারায়

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জ, তরুণ নিহত

‘আমার পুতে জানি কয়বার মা কইয়া ডাকছে’

শাওনকে বিএনপি বলছে যুবদল কর্মী, পরিবারের দাবি অন্য