শাওনের দাফন হলো পুলিশের পাহারায়

সংঘর্ষের দিন যুবদলের মিছিলের অগ্রভাগে দেখা গেছে শাওনকে৷

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2022, 05:42 AM
Updated : 2 Sept 2022, 05:42 AM

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে মারা যাওয়া শাওন প্রধানকে পুলিশের পাহারায় দাফন করা হয়েছে।

শাওনের চাচা ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ২টার দিকে নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শাওনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়৷ পরে নবীনগর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজা ও নামাজের সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল।

২০ বছর বয়সী শাওন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগর এলাকার সাহেব আলীর ছেলে। নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে শাওনদের একতলা বাড়ি।

ময়নাতদন্তের পর শাওনের মরদেহ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে তার বড় ভাই মিলন প্রধান এবং মামা মোতাহার হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ হস্তান্তরের আগে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাসপাতালের মর্গের সামনে অবস্থান নেয়।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে এলাকায় আসে শাওনের মরদেহ৷ আগেই জানাজা ও দাফনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছিলো। লাশ আসার পরপরই ‘তড়িঘড়ি’ করে শাওনের দাফন সম্পন্ন করা হয়৷ এ সময় বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিল৷

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল দশটায় নগরীর ডিআইটিতে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেয়। এতে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ। এই সময় গুলিবিদ্ধ হয় শাওন।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা শাওনকে যুবদল কর্মী বলে চিহ্নিত করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে যুবলীগের কর্মী দাবি করে রাতে বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে৷ সারারাত নিহতের বাড়ির সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান ছিলো।

তবে নিহতের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আলীর ভাষ্য, শাওন যুবদল বা যুবলীগ কোন দলেরই কর্মী না৷

বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপির মিছিলে সে গেছে একথা সত্য৷ ছবিতে, ভিডিওতে সেটাই দেখা গেছে৷ অস্বীকার করার তো সুযোগ নাই৷ তবে যুবদলে সক্রিয়ভাবে ছিল না শাওন৷ স্থানীয় পোলাপানের সাথে মিটিং-মিছিলে যাইতো৷”

তবে শাওনের অন্যান্য স্বজন ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, চাচা আওয়ামী লীগ নেতা হলেও শাওন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন৷ যুবদলের আসন্ন কমিটিতে পদ পাওয়ারও কথা ছিল তার৷ কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিতো সে।

শাওন বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে এমন বেশ কয়েকটি ছবিও পাওয়া যায়৷ সংঘর্ষের দিনও যুবদলের মিছিলের অগ্রভাগে ছিল শাওন৷ ওই মিছিলে শাওনের বা পাশে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী সালামতকেও দেখা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় তিনজন ছাত্রলীগ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী দল নেতা শাহ্ আলী ও সলিমউল্লাহ হৃদয়, যুবদল নেতা আমির বেপারী ও মোহসীন বেপারীর সাথে শাওনের বেশি সখ্যতা ছিলো। বৃহস্পতিবারও তাদের সঙ্গেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে গিয়েছিল শাওন৷।

Also Read: বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জ, তরুণ নিহত