শাওনকে বিএনপি বলছে যুবদল কর্মী, পরিবারের দাবি অন্য

শাওন বক্তাবলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে বিএনপির দাবি; পরিবারের দাবি, তিনি রাজনীতি করতেন না।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2022, 05:54 PM
Updated : 1 Sept 2022, 05:54 PM

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে মারা যাওয়া শাওন প্রধানকে যুবদল নেতা বলছেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি।

তবে শাওন কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে পরিবারের দাবি।

বৃহস্পতিবার শহরের ডিআইটিতে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাওন প্রধান (২০)।

শাওন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগরের প্রয়াত সাহেব আলীর ছেলে। নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে তাদের একতলা বাড়ি।

শাওন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা।

বৃহস্পতিবার সকালে যুবদলের মিছিলের অগ্রভাগে শাওনকে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল ১০টায় নগরীর ডিআইটিতে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেন। এতে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ। এই সময় গুলিবিদ্ধ হন শাওন।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাওনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজন নিজেকে দেওভোগের বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপির কর্মী বলে পরিচয় দেন। তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জানিয়ে ডান পায়ে গুলির আঘাত দেখান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি (২৮) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওর (শাওন) লগে আরও লোক আছিল। আমরাও ছিলাম। তয় ওরে আমরা চিনতাম না। ওয় অন্য গ্রুপের লগে আইছে। পুলিশ যখন গুলি করতেছিল তখন আমরা গুলশান হলের গেটের সামনে ছিলাম। দুইপাশ দিয়াই ইট-পাটকেল মারতাছিল অনেকে। ওই পোলায় একটা ইট হাতে নিয়া রাস্তায় নামার পরই একটা গুলি আইসা তার বুকে লাগে। নিচে পইড়া গেলে তারে তুইলা গুলশান হলের গেটের সামনে আইনা রাখি। পরে ওয় কয়, ‘ভাই আমারে হাসপাতালে নিয়া যান, আমার ভাল্লাগতাছে না’। হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার কইছে ওয় মারা গেছে।”

এদিকে শাওনের মৃত্যুর পরপর ফেইসবুকে বিএনপির একটি মিছিলের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ওই মিছিলের অগ্রভাগে ডোরাকাটা টি-শার্ট ও কালো রঙের জিন্স প্যান্ট পরা অবস্থায় শাওনকে দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে শাওনের মরদেহেও একই টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট রয়েছে। ওই মিছিলে শাওনের বাঁপাশে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী সালামতকেও দেখা গেছে।

এদিকে শাওন ‘রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন’ বলে দাবি করেছে তার পরিবারের লোকজন।

শাওনের বড়ভাই ফরহাদ প্রধান বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ভাই কোনো রাজনীতির সাথে যুক্ত না। স্থানীয় যুবদলের কয়েকজন নেতার ডাকে শাওন মিছিলে যায়। দুপুর ১২টার দিকে জানতে পারি গুলিবিদ্ধ হইয়া শাওন হাসপাতালে।”

তার মামা মীর হোসেনেরও একই দাবি। তিনি বলেন, “শাওন বা তার পরিবারের কেউ সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত না। মিছিলে ছিল কিনা সেইটা জানি না। বিএনপি করত – এমনটা কেউ বইলা থাকলে প্রমাণ করুক।”

শাওন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাওনের বাবা সাহেব আলী আমার আপন চাচাতো ভাই ছিল। সেই হিসেবে শাওন আমার ভাতিজা। শাওনের বড়ভাই মিলন আমার সাথেই থাকে। আমি নিজে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। তবে ওরা ভাইরা সরাসরি কোনো দল করে না। ডাক দিলে আমার লগেও যায়, আবার অন্য কেউ ডাক দিলেও যায়। এলাকার কারও ডাকে শহরে বিএনপির মিছিলে গেল কিনা সেই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত না।”

এদিকে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুবদলের সক্রিয় কর্মী শাওন। বক্তাবলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল সে। আমার সাথেই মিছিলে ছিল শাওন। পুলিশ চড়াও হইলে অন্য পাশে চইলা যায়। সেইখানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শাওন।”

পরিবারের সদস্যদে বিষয়ে তিনি বলেন, “পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের থাকলেই যে সে বিএনপি করতে পারবে না এমন তো না। বাবায় আওয়ামী লীগ ছেলে বিএনপি করে এমনও আছে। শাওন যুবদলের সক্রিয় কর্মী। শান্তিপূর্ণ একটি প্রোগ্রামে পুলিশের গুলিতে সে মারা গেছে। এইটারে অন্যদিকে প্রবাহিত করার সুযোগ নাই।”

জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক সময় ছাত্রদল করত শাওন। সেখান থেকে যুবদলে যোগ দেয়। এর আগেও একাধিক কর্মসূচিতে শাওন যোগ দিছে। মূলত সাদেক ভাইয়ের (সাদেকুর রহমান) সাথে মিছিলে আসছিল সে।”