জেলা শহরের সুনামগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও তাহেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও চিকিৎসকদের আবাসিক কোয়ার্টারও প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও অঝোরধারায়, আবার কখনও গুড়িগুড়ি। এরই মধ্যে ঝড়-বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। গত ১০ দিন ধরেই এই অবস্থা চলছে জেলাজুড়ে।
হাওর অধ্যুষিত এ জেলার সড়ক ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কয়েক জায়গায়। পানি উঠে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও। পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় দিতে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বরাদ্দ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও চাল।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, “সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপরে আছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমার পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃষ্টিপাত ও ঢল অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়বে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটার আশঙ্কা করছে এলাকার মানুষজন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলাসহ কয়েকটি স্থানে ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ছাতকে ১০০টি পরিবার এবং দোয়ারাবাজারে ৩০টি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
“তাদেরকে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার এবং সাড়ে ১৪ কেজির শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বানভাসীদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১৪০ মেট্রিক টন জিআরের চাল, ১২ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে।”
প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি রেখেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরের কালিপুর, ওয়েজখালি, হাজিপাড়া, তেঘরিয়া, নবীনগর, পূর্ব নতুনপাড়া, হাসননগরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। শহরের বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। যারা দরিদ্র ও নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে অবস্থান করেন তারা উঁচু এলাকায় এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। এই এলাকাগুলোর সড়ক প্লাবিত হওয়ায় চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে।
জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন আব্দুল্লাহ আল বেরুনি খান দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলার তিনটি হাসপাতালে পানি উঠেছে। এর মধ্যে দুটি হাসপাতালের ভিতরে পানি ঢুকে গেছে।
আর তাহেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কম্পাউন্ডে পানি ঢুকেছে। হাসপাতালের ভিতরে এখনও যায়নি। বৃষ্টি আরও হলে বন্যায় পানি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে পড়বে। সেখানে রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় রোগীরা আসতে পারছে না। মানুষের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অতনু ভট্টাচার্য দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন দিন ধরে হাসপাতালের নিচতলায় পানি উঠেছে। আগে নিচতলায় জরুরি বিভাগ ছিল এখন সেটি দোতলায় নিয়ে আসা হয়েছে। রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
“এ ছাড়া রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় রোগীদের আসতেও কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখানে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আরও পানি বাড়লে সমস্যা হবে খুব।”
কৈতক ২০ শয্যার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখান আবাসিক কোয়ার্টারে পানি ঢুকে গেছে। ফলে সেখানকার চিকিৎসকদের পরিবার বিপদে পড়েছে।
“হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় আউটডোরের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ফলে জরুরি চিকিৎসা ছাড়া কেউ আসছেন না। অন্য রোগীদের দোতলায় রাখা হয়েছে। সেবা তো ব্যাহত হচ্ছেই।”
“আমার মতো এই এলাকার শত শত কৃষক খরচার হাওরের উঁচু জমিতে যে ইরি-বোরো আবাদ করেছিলেন তা তলিয়ে গেছে।”
কালিপুর গ্রামের কৃষক বদরুজ্জামান বলেন, “আমরা পৌর এলাকার বাসিন্দা। আমাদের রাস্তায় বুক পানি। প্রায় ২০০ ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। আমরা বিসিক ও পুলিশ লাইনসে এসে আশ্রয় নিয়েছি।”
গরিব মানুষদের খাদ্য সহায়তার আহ্বান জানান এই কৃষক।