শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশনের দ্বিতীয় দিনে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
Published : 20 Jan 2022, 03:33 PM
এদের মধ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কাজল দাসকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আর একই শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুন নাঈম নিশাত ও লোকপ্রশাসন বিভাগ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফাহমিদার শরীরে স্যালাইন পুশ করা হচ্ছে বলে অনশনরত শিক্ষার্থী নাফিসা আনজুম জানান।
লোকপ্রশাসন বিভাগের এই শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনরত ২৪ জনের মধ্যে কাজল বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার ১২টা ৪০মিনিটের দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিলেটের রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
“অনেকই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে; আমরা পর্যাপ্ত মেডিকেল সাপোর্ট পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও আমাদের কোনো মেডিকেল সাপোর্ট দিচ্ছে না।”
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী গণিত বিভাগের উমর ফারুক বলেন, “আমাদের ২৪ জন ভাইবোন অনশনে আছে। দাবি আদায়ে এই ২৪ জন যদি মারা যায়, আরও ২৪ জন অনশনে বসবে। এভাবে মরতে মরতে ভিসির বাসভবনের ফটকের সামনের স্থান একটি মৃত্যুক্ষেত্র তৈরি হবে। তবুও আমরা আমাদের দাবিতে অনড় থাকব।”
এদিকে বেলা ১২টার দিকে কোষাধ্যাক্ষ নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অনশনস্থলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যায়।
শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এতদিন হয়ে গেছে আমাদের জন্য আপনারা কোনো কিছুই করতে পারেন নি। আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ না করলে আমরা কোনো কথা শুনব না।”
কোষাধ্যাক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম অনেক অনুরোধের পর শিক্ষার্থীরা তাদের ২ মিনিট কথা বলার সুযোগ করে দেন। তখন তিনি বলেন, “আমরা তোমাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।”
এসময় শিক্ষার্থীদেরকে মোবাইল ফোনে শিক্ষকরা হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কোষাধ্যাক্ষ বলেন, শিক্ষকরা চাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ক্ষেত্র তৈরির করার জন্য। এজন্য শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে শিক্ষর্থীদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করছে।
শিক্ষার্থীদের হুমকির পাওয়ার বিষয়টি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দাবি করেন তিনি।
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সোমবার বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরের দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
ওই ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগে’ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।