যেদিন রায় কার্যকর হবে সেদিন ভাববো বিচার পেয়েছি: আবরারের মা

বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার মা রোকেয়া খাতুন।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2021, 10:05 AM
Updated : 8 Dec 2021, 10:32 AM

কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাসা থেকে রোকেয়া খাতুন বলেন, “আদলত যে রায় দিয়েছেন আমরা তাতে সন্তোষ প্রকাশ করছি। সেই সাথে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি করছি।

“যেদিন এ রায় কার্যকর হবে সেদিন ভাববো আমরা বিচার পেয়েছি।”

দুই বছর আগে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যার বিচার শেষে বুধবার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান।

মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাবস্ত করে আদালত। তাদের ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড আর পাঁচজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আবরারের মা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম প্রত্যেক আসামির সবোর্চ্চ শাস্তি ফাঁসি। তবে আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সেই সঙ্গে আমি অমিত সাহার ফাঁসি চাই।”

আসামি অমিত সাহাকে আদালত যাবজ্জীবন দিয়েছে। কেন তার ফাঁসি চান সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি আবরারের মা।

আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ এবং বাবাও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন।

ফায়াজ আরও বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর পর্যালচনা করে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

আবরারের বাবা, এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। তিনিও রায় দ্রুত কার্যকর হবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। তারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিল।”

বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে আসে। দুই পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রাখেন। কিন্তু আরও কিছু ‘সময় দরকার’ জানিয়ে সেদিন রায় পিছিয়ে ৮ ডিসেম্বর নতুন তারিখ রাখেন বিচারক।

সে অনুযায়ী বুধবার সকালেই কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের অনেককে এজলাসে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহও উপস্থিত ছিলেন এজলাস কক্ষে।

জনাকীর্ণ আদালতে ২০ আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করে বিচারক বলেন, “মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হল।”

বাকি পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাদের আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে।

রায়ে আদালত বলেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামিদের সবার সংশ্লিষ্টতা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে।

“আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদ রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে… যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে।

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে তা রোধকল্পে এ ট্রাইবুনালে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল।”

পুরনো খবর