আবরার হত্যায় ২৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে, আশা রাষ্ট্রপক্ষের

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের রায় হবে বলে আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2021, 02:09 PM
Updated : 24 Oct 2021, 02:10 PM

রোববার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় এ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল।

শুনানিতে তিনি বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। ঘটনার আগে আবরার গ্রামে ছিলেন। আসামিরা তার আসার অপেক্ষায় ছিলেন। বুয়েটের হলে ফেরার পর তারা তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিচার বসায়। তার উপর ‘মৃদু’ আক্রমণ করে; আস্তে আস্তে আক্রমণ জোরালো হয়। শেষ পর্যন্ত পিটিয়ে মেরেই ফেললেন।

“যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। কেউ নিরাপরাধ থাকলে মাননীয় আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবেন। যারা অপরাধ করেছে, তারা যেন শাস্তির আওতায় আসে। তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করি। আবরারের মা যেন বলতে পারেন, ন্যায়বিচার পেয়েছি।”

রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি জানান, এই মামলার ৬০ সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জন আদালতের কাছে জবানবন্দিতে ‘মারপিট করে আবরারকে হত্যার’ বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

৭৫ শতাংশের বেশি সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করার দাবি করে তিনি বলেন, “তাই প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।”

এরপর বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। আদালত বাকি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ঠিক করেন।

এদিন কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আরেক কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইঞা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন।

বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার আসামিরাও সবাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।

পরদিন তার বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে।

পাঁচ সপ্তাহ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ওইবছর ১৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে আসামি করা হয় মোট ২৫ জনকে।

প্রায় এক বছর পর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

আবরার হত্যায় অভিযুক্ত যারা

এজাহারের ১৯ আসামি: বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশারফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মুজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ), এ এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) ।

এজাহারের বাইরের ৬ আসামি: বুয়েট ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোসের্স, ১৬ ব্যাচ), শামসুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) এবং মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।

পলাতক ৩ জন: এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাহমুদুল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) এবং মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল)।

‘স্বীকারোক্তি’ দিয়েছেন ৮ জন: মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং খন্দকার তাবাখ্খারুল ইসলাম তানভীর।

মারপিটে সরাসরি জড়িত ১১ জন: মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বি তানিম এবং খন্দকার তাবাখ্খারুল ইসলাম তানভীর।

ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত ১১ জন: মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মনিরুজ্জামান মনির, ইফতি মোশাররফ সকাল, মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ এবং মুজতবা রাফিদ।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। কারাগারে থাকা ২২ আসামি গত ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। তিন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি।

এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। এ মামলার চার্জ গঠনের সময় শব্দগত ত্রুটি থাকায় ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ তা সংশোধনের আবেদন করে। পরদিন ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ গঠন করে আদালত।

আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে।

পুরনো খবর-