উত্তাল বুয়েটে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে উপাচার্য
নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 08 Oct 2019 06:08 PM BdST Updated: 09 Oct 2019 01:06 AM BdST
-
-
-
-
-
-
-
বুয়েটে দেয়াল লিখনে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবি
-
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে।
শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে তিনি ‘নীতিগতভাবে’ একমত জানালেও আট দফা মেনে নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা না পেয়ে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধসহ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরতরা।
রোববার গভীর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের লাশ উদ্ধারের পর সোমবার সারাদিন সিসিটিভি ফুটেজের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
সেই ফুটেজের ভিত্তিতে মামলা করেন আবরারের বাবা; এরপর বুয়েট ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ছাত্রলীগও বহিষ্কার করে ১১ নেতা-কর্মীকে।
আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচির মধ্যে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীরা জড়ো হন তাদের ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে। সেখানে আট দফা দাবিনামা তুলে ধরেন তারা।
উপাচার্য কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, তা তাকে ক্যাম্পাসে এসে মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ব্যাখ্যা করতে দাবি তোলা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বিকাল সোয়া ৪টার পর ক্যাম্পাসে এলেও শহীদ মিনারে বিক্ষোভস্থলে না গিয়ে নিজের কার্যালয়ে চলে যান।
দিনভর শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভের পর শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের নিচে অবস্থান নেন।
কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর ওই অবস্থান থেকে স্লোগান ওঠে- ‘ভিসি স্যার নীরব কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার ভাই কবরে, ভিসি কেন ভেতরে’, ‘প্রশাসন নীরব কেন, জবাব চাই দিতে হবে’।
সেই সঙ্গে চলতে তাদের মূল স্লোগান- ‘আবরারের খুনিদের, ফাঁসি চাই দিতে হবে’।

সাড়ে ৫টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ের ফটকেও তালা দেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য যখন তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন, তখন তালা খুলে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যা ৬টার পর উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল দোতলা থেকে নেমে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সামনে এলে শুরু হয় হট্টগোল।
এ সময় তিনি বলেন, “আমাদের ইউনিভার্সিটির যে নিয়ম, যে অনুযায়ী আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে। তদন্ত কমিটি কাজ করবে, তোমরা যেভাবে চাইছো, আমরা সেভাবে বহিষ্কার করব।”
উপাচার্য আরও বলেন, ”তোমাদের সবগুলো দাবি আমরা নীতিগতভাবে মেনে নিচ্ছি। সেগুলো অবশ্যই মানা হবে।”
কিন্তু শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। উপাচার্যের অনুপস্থিতি নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তারা।
এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, “আবরার হত্যার ঘটনার পর কেন আপনি ক্যাম্পাসে আসেননি?”
জবাবে উপাচার্য বলেন, “আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম।”
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
আবরারের জানাজায় না আসার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “আমি সারাদিন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মিটিং করেছি। এগুলো না করলে দাবিগুলোর সমাধান হবে কীভাবে?
“সব তো আমার হাতে নেই। তোমাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি।”
তখন আরেক শিক্ষার্থী জানতে চান, “স্যার আপনি কী কাজ করছেন?”
“তোমাদের এই ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করছি। আমি রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করেছি,” জবাব আসে উপাচার্যের।
প্রায় আধা ঘণ্টা এ অবস্থা চলার পর আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই উপাচার্য আবার উপরে তার কার্যালয়ে চলে যান।
তখন আবার ফটক তালাবদ্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। তারা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন।

বুয়েটে দেয়াল লিখনে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবি
এর মধ্যেই ২০১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবুল মনসুর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। মামলার চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত বুয়েটের আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজ স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে।”
শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফর ইকবাল খানের পদত্যাগের দাবি তুলে মনসুর বলেন, “প্রভোস্ট ঘটনার পরেও দায়িত্ব পালন করেনি; বরং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এজন্য অবিলম্বে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করছি।”
আবরারের বাবা কুষ্টিয়াবাসী অবসরপ্রাপ্ত ব্র্যাককর্মী বরকতুল্লাহ মোট ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় মঙ্গলবার আরও তিনজনসহ এই পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে অতিসত্বর মামলার নিষ্পত্তি করতে অপরাধীদের সাজা কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বুয়েটের আন্দোলনকারীরা।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েট ক্যাম্পাসে মোমবাতি জ্বালিয়ে মৌনমিছিলে শিক্ষার্থীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
এই অবস্থান কর্মসূচি চলার মধ্যে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাজিদ জানান, বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আলোচনা করে মঙ্গলবার দিনের কর্মসূচি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ের ফটক থেকে তালা খুলে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের ৮ দফা
>> খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
>> ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের শনাক্ত করে তাদের আজীবন বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
>> দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে আবরার হত্যা মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে
>> বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি, তা তাকে ক্যাম্পাসে এসে মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে ব্যাখ্যা করতে হবে। ছাত্রকল্যাণ শিক্ষককেও (ডিএসডব্লিউ) বিকাল ৫ টার মধ্যে সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবে।
>> আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। আহসানউল্লা হল ও সোহরাওয়ার্দী হলে ঘটা আগের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে বাতিল করতে হবে।
>> রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
>> মামলার খরচ এবং আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
>> বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে।

এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থীরা সকালে শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষোভ শুরুর পর একদল সাবেক শিক্ষার্থীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল মিছিল করে এসে বেলা পৌনে ১২টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
পরে বুয়েট শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা সমাবেশস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। আবরার ফাহাদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ।
তিনি বলেন, “আমরা অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা- শিক্ষকরা বলি, প্রশাসন বলি, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি।”
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার থেকে পলাশী হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়। সেখান থেকে বুয়েটের পূর্ব প্রান্তে খেলার মাঠ হয়ে তারা আবার বুয়েট শহীদ মিনারে ফিরে আসে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবরারের জন্য গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল হয়।
গায়েবানা জানাজার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা করায় আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। আবরারের রক্তস্নাত দেশবিরোধী চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।”
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক কয়েকটি চুক্তি নিয়ে ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে হলের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
আরও খবর
আবরার ফাহাদ হত্যা: ঢাবিতে গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল
অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ হয়েছি: বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি
ফাহাদ হত্যা: বিচারের দাবিতে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
আবরার হত্যা: ১১ জনকে বহিষ্কার করল ছাত্রলীগ
বুয়েটছাত্র আবরার হত্যায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আবরার হত্যা: ১০ আসামি পাঁচদিনের রিমান্ডে
-
ইডিইউতে ৩৩ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে সম্মাননা
-
ঢাবির হল খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল, পরীক্ষাও স্থগিত
-
আইইউবি’র নতুন উপাচার্য অধ্যাপক তানভীর হাসান
-
দ্রুত হল খোলার দাবিতে ঢাবির শহীদুল্লাহ হলে শিক্ষার্থীরা
-
ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ৮ মার্চ থেকে
-
আইইউবিএটিতে একুশ পালন
-
স্টামফোর্ডে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
-
অনলাইনে আইইউবি’র স্প্রিং ২০২১ সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
সর্বাধিক পঠিত
- বদলি করা হল চট্টগ্রামের মানবিক পুলিশ ইউনিটের শওকতকে
- পৃথ্বী ১৫২ বলে ২২৭, রেকর্ডের ছড়াছড়ি
- দেশে ফিরে হুইল চেয়ারে চড়ে গাড়িতে উঠলেন ফখরুল
- ছক্কার রেকর্ডে রোহিতকে ছাড়িয়ে গাপটিল
- পদ্মায় রেল সংযোগ: চীনা ঠিকাদারের কথা উড়িয়ে দিলেন রেলমন্ত্রী
- ইংল্যান্ড বাদ, ড্র করলেই ফাইনালে ভারত
- মেসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব: মাসচেরানো
- যেভাবে গ্রাহকের টাকা হাতিয়েছিলেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা
- স্পিন স্বর্গে ২ দিনেই ইংল্যান্ডকে হারাল ভারত
- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাকের কারাগারে মৃত্যু