মুন্সীগঞ্জের সদরে মেঘনায় ইলিশ-রক্ষা অভিযান চলাকালে নৌ-পুলিশের উপর ‘জেলেদের হামলার’ পর সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
Published : 21 Oct 2021, 04:16 PM
উপজেলার চরঝাপটায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার এই সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, জেলেদের পিটুনিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর জখম হয়েছেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
আহত গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল কবির হোসেনকে ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আব্দুস সালাম, এস আই শাহ আলম, এস আই ফয়সাল কবীর ও কনস্টেবল নজরুল ইসলামকে ঢাকার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চারঝাপটা গ্রামের বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ হাফেজ আলীকে (৬০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে মেঘনায় মা ইলিশ নিধনের সময় গজারিয়া নৌ-পুলিশের অভিযান চলাকালে জেলেরা নদীতেই পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়। এরপর পুলিশ জেলেদের পাল্টা ধাওয়া করলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আব্দুস সালাম বলেন, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর পুলিশ মেঘনার তীরে উঠে আসে। আত্মরক্ষায় শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
“কিন্তু দুইটি শটগানের সব গুলি শেষ হয়ে যাওয়ার পর জেলেরা নৌ-পুলিশকে নির্মমভাবে পেটায় এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে। কয়েকজন পুলিশ দৌড়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়ে যান।”
আহত পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, সংঘর্ষ চলাকালে চর আব্দুল্লাহ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। তারা এগিয়েও আসেনি। চোখের সামনে অন্য পুলিশকে বেধড়ক পোটালেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির টিমে থাকা ১০ জনই জেলেদের আক্রমণের শিকার হলেও চর আব্দুল্লাহ ফাঁড়ির টিম ছিল অক্ষত।
গজারিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আহত মো. আব্দুস সালাম বলেন, “নদীতে আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করে জেলেরা পালিয়ে যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সদরের চর আব্দুল্লাহ নৌ-পুলিশকে সহযোগিতা চেয়ে জেলেদের ধাওয়া করি; কিন্তু তারা নদীতে কাছাকাছি থাকলেও আমাদের কোনো সহযোগিতা করেনি।
“আমাদের পেছনে যাদের সহযোগিতার আশা করেছিলাম, তা পাইনি। এটি ভাবতেও পারি না। পুলিশ হয়ে পুলিশের সাথে এমন আচরণ!”
আহত কনস্টেবল নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের উপর হামলার সময় নদীতে স্পিডবোট থেকে চর আব্দুল্লাহর নৌপুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে। আমাদের বাঁচাতে আসেনি।”
মন্সীগঞ্জের জেলা মৎস্য অফিসার শামশুল করিম বলেন, চর আব্দুল্লাহ নৌ পুলিশ গত ১০ অক্টোবর মেঘনা নদীতে একটি অভিযান পরিচালনাকালেও রহস্যজনক ভূমিকায় ছিল।
“জেলেরা পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও মৎস্য কর্মকর্তার উপর আক্রমণ করলেও চর আব্দুল্লাহ নৌ-পুলিশের স্পিডবোটকে ডেকে পাওয়া যায়নি। অনেক পরে তারা ঘটনাস্থলে আসে। পরে আক্রমণকারীদের ধরার জন্য প্রস্তুতিতে নিলে ভুল তথ্য দিয়ে অন্য স্থানে নিয়ে যায়।”
তবে চর আব্দুল্লাহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ঘটনার সময় আমি ছিলাম না; তবে আমার পুলিশ সদস্যরা তাদের রক্ষায় চেষ্টা করেছে।”
এই ব্যাপারে নৌ-পুলিশের এসপি মিনা মাহমুদ বলেন, “বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে চর আব্দুল্লাহ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটলেও চর আব্দুল্লাহ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তাকে বেলা ১০টার দিকে অবহিত করা হয়েছে বলে এসপি মিনা মাহমুদ জানান।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নিরাপদ করতে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদ-নদী এবং সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছিল।